নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

ঢাকা মঙ্গলবার। রাত ১০:৪৮। ২৯ জুলাই, ২০২৫।

রাজশাহীতে এক কলেজে দুই কমিটি দুই অধ্যক্ষ: একপক্ষ অপরপক্ষকে অবৈধ দাবি

জুলাই ২৮, ২০২৫ ১০:৩৭
Link Copied!

স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহী নগরীর আলহাজ্ব সুজাউদ্দৌলা কলেজে এডহক কমিটি ও অধ্যক্ষের দায়িত্ব নিয়ে দুই পক্ষ নিজেরদের সঠিক ও অন্যদের অবৈধ দাবি করছে। একপক্ষ অপর পক্ষের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন ও করেছে।

গত ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তৎকালীন অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান পদত্যাগ করে, এবং কলেজ পরিচালনা কমিটি জৈষ্ঠতার ভিত্তিতে মো: আলমগীর হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব অর্পন করে। সরকার পতনের পরে কলেজে এডহক কমিটির সভাপতি হিসেবে পারভেজ রায়হান পরিচালক (যুগ্ন সচিব), স্থানীয় সরকার, রাজশাহী বিভাগ, রাজশাহী’কে সভাপতি হিসেবে নিযুক্ত করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। পরবর্তীতে কলেজ কমিটির একাংশ গত ২৪ এপ্রিল ২০২৫-এ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদকে সভাপতি করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নতুন একটি এডহক কমিটি অনুমোদন করে, নতুন কমিটির বিপক্ষে ৩০ এপ্রিল ২০২৫-এ কলেজের অপরাংশ যুগ্নসচিব পারভেজ রায়হানকে সভাপতি পদে পুনবহাল রাখার অনুমোদন নিয়ে আসে। পরবর্তীতে অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হয়ে পুনরায় সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করে আলমগীর হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত অধক্ষ্যের দায়িত্ব প্রদান করে। গত ৯ জুলাই ২০২৫ হাইকোর্টের আদেশে স্থিতি থাকা অবস্থায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিলরুবা পারভিন রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. শিরিন সুফিয়া খানমকে সভাপতি করে নতুন এডহক কমিটি অনুমোদন করে।

পারভেজ রায়হানকে পুনরায় দায়িত্ব পালনের অনুমতি নিয়ে আসার পর কলেজ পরিচালনা কমিটি, কিছু শিক্ষক ও দাতা পরিবারের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে জৈষ্ঠ্যতার ভিত্তিতে ১০ নম্বরে থাকা জৈষ্ঠ সহকারী অধ্যাপক দিলরুবা পারভিনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব অর্পন করে। আর পাল্টা-পাল্টি কমিটি ও অধ্যক্ষের দায়িত্ব নিয়ে বিপাকে কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সকল কর্মকর্তাবৃন্দ।

আরও পড়ুনঃ  শিক্ষিকা মাসুকার কবরে গার্ড অব অনার

তবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আলমগীর হোসেন অপরপক্ষকে অবৈধ দাবির বিষয়ে যেসকল বিষয় তুলে ধরেন, ২৪ এপ্রিল ২০২৪-অনুমোদিত অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদের এডহক কমিটি স্থিতি রাখার জন্য গত ২২ জুলাই ২০২৫ পর্যন্ত হাইকোর্ট নির্দেশ প্রদান করে, পারভেজ রায়হান সভাপতি হিসেবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আলমগীর হোসেনকে অব্যাহতি প্রদান ও দিলরুবা পারভিনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দ্বায়িত্ব অর্পনের চিঠি গুলোতে পারভেজ রায়হানের সহি-স্বাক্ষর নিয়ে আপত্তি এবং জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম ভংগ করে জ্যেষ্ঠ দশম নম্বর শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান করা যা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম বহির্ভুত।

কলেজের সাবেক সভাপতির চিঠির সিল সহি ও একই চিঠিতে অন্য দুইজনের সহির বিষয় নিয়ে পরিচালক (যুগ্ন সচিব), স্থানীয় সরকার, রাজশাহী বিভাগ পারভেজ রায়হানের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে চিঠিগুলো দেখালে, চিঠি গুলো তার প্রেরণ করানা এমনকি সীল-সহি নিয়ে তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেন। এসব চিঠির মুলকপি বা তার সময়ের সহি-স্বাক্ষর করা কাগজপত্র দেখার জন্য তিনি কলেজ কমিটির সাবেক শিক্ষক প্রতিনিধি প্রভাষক মেহেদি হাসানের সাথে দেখা করতে বলেন। তবে প্রভাষক মেহেদি হাসান এসকল চিঠির মুল কপি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিলরুবা পারভিনের কাছে থাকতে পারে বলেন। তিনি এর চেয়ে বেশি কিছু জানেন না এমনকি নিজের নিরাপত্তাহীনতার কথাও জানান।

তবে চিঠিগুলো জাল হলে করণীয় কি জানতে চাইলে যুগ্মসচিব পারভেজ রায়হান বলেন, “আমি এখন আর সভাপতি নাই তাই এসব নিয়ে চিন্তা করছিনা এসকল চিঠির বিষয়ে কলেজ চাইলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।”

এবিষয় নিয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিলরুবা পারভিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “কাগজপত্র যাচাই-বাছাই কমিটিকে দিবেন এবং তাদের সিদ্ধান্তের পর মতামত জানাবেন।”

আরও পড়ুনঃ  ১১ দিনের আইনশৃঙ্খলা সতর্কতার বিশেষ নির্দেশনার বিষয়ে জানা নেই: আইজিপি

গত ৯ জুলাই ২০২৫-এ অনুমোদিত কমিটির বিষয় নিয়ে অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ পক্ষের হাইকোর্টের আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “২২ জুলাই ২০২৫ পর্যন্ত অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদের কমিটি স্থিতিশীল থাকবে, হাইকোর্টের বিচারক ছুটিতে থাকায় নতুন কোন আদেশ না পাওয়া পর্যন্ত আগের আদেশই বলবৎ থাকবে। নতুন কমিটি করে হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করেছে যা আদালত অবমাননার অপরাধ।”

কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণের নিয়মের বিষয় নিয়ে জানতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক মো: আব্দুল হাই সিদ্দিক সরকারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে প্রথম ৫জনের মধ্যে থেকে একজনকে দায়িত্ব প্রদান করা যাবে তবে কোনভাবেই জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে দশম নম্বর শিক্ষক দায়িত্ব পাবেনা, কোন সুযোগ নাই।”

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন শিক্ষক বলেন, “প্রভাষক মেহেদি হাসান আমাদেরকে কলেজের উন্নয়ন করার জন্য আবেদন করবে তাতে সকল শিক্ষকের সহি লাগবে আপনারা সহি করেন বলে সাদা কাগজে সহি নেয়, এখন শুনছি সেই সহি করা কাগজ নিয়ে দিলরুবাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নাকি আমরা সমর্থন করেছি, আমাদেরকে ভুল বুঝিয়ে সহি করিয়ে এখন এটা কোথায় কি কাজে ব্যবহার করছে সেটা নিয়ে আমরা চিন্তায় আছি।”

এছাড়াও কয়েকজন শিক্ষকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা কলেজের এই জতিলতা নিয়ে মত প্রকাশ করতে রাজি হয়নি, তবে অধ্যক্ষের দায়িত্ব নিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

সদ্য অনুমোদন পাওয়া এডহক কমিটির সভাপতি প্রফেসর শিরিন সুফিয়া খানমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “কাগজপত্র দেখে সিদ্ধান্ত নিবো।” পরবর্তীতে তিনি কলেজে মিটিং করে চার জন শিক্ষককে কাগজপত্র যাচাই-বাছাইএর দায়িত্ব প্রদান করে, যাচাই-বাছাই করে তিনি দিলরুবা পারভিনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে অনুমতি প্রদান করে। তবে কাগজপত্রের যাচাই-বাছাই নিয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আলমগীর হোসেন বলেন, “আমি কাগজ-পত্র বিদ্যোৎসাহী সদস্যকে দিয়েছি তারা আমার পক্ষের কোন কাগজ পত্র দেখেননি। দেখলে অন্তত হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করতেন না।”

আরও পড়ুনঃ  দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় স্টারলিংকের ইন্টারনেট ব্যবহার করে বাড়ছে প্রতারণা

গত সপ্তাহে একপক্ষের শিক্ষক নির্বাচন ছিলো সেটাও অনিবার্য কারনে স্থগিত হয়ে যায়। তবে কলেজ সুত্র থেকে জানা যায় সভাপতি প্রফেসর শিরিন সুফিয়া খানম অসুস্থ থাকায় নির্বাচন স্থগিত করা হয়। এছাড়াও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কক্ষে তালা আটকানো থাকায় অপর পক্ষের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিলরুবা পারভিন অধ্যক্ষের চেয়ারে বসতে পারছেন না।

গত ৫ আগষ্ট সরকার পতনের পরে আলহাজ্ব সুজাউদ্দৌলা কলেজের অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান পদত্যাগ করে এবং আলমগীর হোসেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকে এযাবৎ একই কলেজের এডহক কমিটি ও অধ্যক্ষ নিয়ে দুই পক্ষ তৈরি হয় এবং হাইকোর্টের আদেশ ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আদেশে কলেজে এখন দুইটা এডহক কমিটি ও দুইজন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তবে নিজেদেরকে বৈধ এবং অপরপক্ষকে অবৈধ দাবি করা নিয়ে চলছে নাটকীয়তা।

এইসকল সমস্যা নিয়ে সঠিকভাবে পাঠদানে সমস্যা, কলেজের ব্যাংক হিসাবে লেনদেন বন্ধ থাকায় আগামীতে দেখা দিতে পারে জটিল সমস্যা। উল্লেখ একপক্ষের অধ্যক্ষ দিলরুবা পারভিন আলহাজ্ব সুজাউদ্দৌলার ছোট ছেলের বউ।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল সময়ের কথা ২৪ লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন somoyerkotha24news@gmail.com ঠিকানায়।