স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহীতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে হাজারো পরিবার। পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চকরাজাপুরে অনেক ঘরবাড়ি পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এছাড়া গোদাগাড়ী উপজেলার চরআষাড়িয়াদহ, পবার চর মাজারদিয়া এবং নগরের নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকেছে। তবে বুধবার থেকে রাজশাহী পয়েন্টে পানির উচ্চতা স্থিতিশীল রয়েছে।
রাজশাহী শহরের জন্য পদ্মার পানির বিপৎসীমা ১৮ দশমিক ০৫ মিটার। বুধবার সকাল ৯টায় পানির উচ্চতা পাওয়া যায় ১৭ দশমিক ৪৯ মিটার। বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা পর্যন্ত পানির পরিমাপ একই ছিল। নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে বিপৎসীমার মাত্র ৫৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে। পদ্মা পাড়ের বস্তিগুলোর মানুষেরা নদীর পানি কমে যাওয়ার দিকেই তাকিয়ে আছেন।
রাজশাহী নগরের পঞ্চবটি খড়বোনার বাসিন্দা মাজেরা বিবি। পদ্মাপাড়ে মাজেরা বিবির বাড়িতে এখন হাঁটুপানি। মাজেরা বলেন, ‘এক সপ্তাহ ধইরি পানির ভিতরেই আছি বাপ। কিছু তো করার নাই। তাকায় আছি যে কবে পানি নামবি। পানিত থাইকি হাত-পাও সব ঘা হয়ে গেল। খালি চুলকায়।’
নগরের শ্রীরামপুর এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের পাশের বস্তিতে বাস করে অনেক পরিবার। বুধবার সকালে এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পদ্মা নদীর পানি এসে ঢুকেছে বাড়িঘরে। বস্তির বাসিন্দা মোতাহার হোসেন বলেন, ‘আমরা শহরেই থাকি, কিন্তু বাস করি গ্রামের মতো। নদীতে পানি বাড়লেই ঘরবাড়ি ডুবে যায়। এটা আমাদের প্রতিবছরের দুর্ভোগ।’
এদিকে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চকরাজাপুর ইউনিয়নে পদ্মার আকস্মিক বন্যায় তলিয়ে গেছে শত শত হেক্টর ফসলি জমি। এতে প্রায় ৬০০ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বন্যা ও নদীভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে বহু বাড়িঘর। ফসল হারিয়ে দিশেহারা কৃষকেরা এখন কাঁচা ধান গরুর খাবার হিসেবে কেটে নিচ্ছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, চকরাজাপুর ইউনিয়নের মাঠগুলোতে এখন শুধু পানি আর পানি। গলাপানিতে নেমে ধান কাটছিলেন চায়না বেগম (৩৫) ও তাঁর স্বামী শমশের আলী (৪০)। শমশের আলী জানান, ২৫ হাজার টাকা বিঘা হিসেবে পাঁচ বিঘা জমিতে আউশ ধান চাষ করেছিলেন। প্রতি বিঘায় খরচ হয়েছে প্রায় ৫ হাজার টাকা। তিনি বলেন, ‘কাঁচা ধান গরুর জন্য কেটে নিচ্ছি। এবার আমরা সারাবছর কী খেয়ে বাঁচব, সেই চিন্তায় মরে যাচ্ছি।’
রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুর রহমান অঙ্কুর বলেন, ‘পদ্মা নদীর পানি এখন স্থিতিশীল রয়েছে। পানি এখনও বিপৎসীমার নিচে আছে। তবে বিপৎসীমার এক মিটার নিচে থেকেই আমরা সতর্কতা অবলম্বন করি। আমরা সতর্ক আছি।’