নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

ঢাকা শুক্রবার। রাত ৮:২২। ৪ জুলাই, ২০২৫।

রেবেকা হত্যা মামলা: দেড় যুগ পর রহস্য উদঘাটন

এপ্রিল ১১, ২০২৩ ৬:৫৪
Link Copied!

স্টাফ রিপোর্টার: জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার এক ব্যক্তি নিজের মেয়েকে কুপিয়ে হত্যা করেছিলেন। তারপর প্রতিপক্ষের ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। সেই মামলার তদন্ত শেষে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) প্রতিপক্ষের ২০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্রও দাখিল করেন। দীর্ঘ সময় আদালতে বিচার চলে।

কিন্তু বিচার চলাকালে আদালতের মনে হয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল হয়েছে তারা প্রকৃতপক্ষে ঘটনার সাথে জড়িত নন। পুনরায় তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীকে শনাক্ত করা প্রয়োজন। তাই আদালত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) মামলাটি পুনঃতদন্ত করতে দিয়েছিলেন। পিবিআইয়ের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, অন্য কেউ নয়; রেবেকা খাতুন (১৩) নামের এই মেয়েটিকে হত্যা করেছিলেন তার বাবা আকসেদ আলী সিকদার নিজেই।

আকসেদ আলী বাঘা উপজেলার লক্ষ্মীনগর গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। ২০১৯ সালে তিনি মারা গেছেন। পিবিআইয়ের তদন্তের পর তাঁর দুই স্ত্রী ভায়েলা বেওয়া (৬৫) ও আফিয়া বেওয়া (৬০) গত রোববার (৯ এপ্রিল) আদালতে হাজির হয়ে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছেন। সেখানে তারা জানিয়েছেন, এতদিন স্বামীর ভয়ে তারা এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে মুখ খুলতে পারেননি।

আরও পড়ুনঃ  টিআর কর্মসূচিতে প্রযুক্তি-ল্যাব, হাতে-কলমে শিখবে শিক্ষার্থীরা

দীর্ঘ ১৮ বছর পর এ মামলার রহস্য উদঘাটন বিষয়ে মঙ্গলবার পিবিআইয়ের রাজশাহী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সেখানে সাংবাদিকদের এই মামলার বিস্তারিত জানান পিবিআই রাজশাহীর প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম আযাদ। তিনি জানান, আকসেদ আলীর দুই স্ত্রীর মধ্যে আফিয়ার মেয়ে ছিল রেবেকা। ২০০৪ সালের জুন মাসে নিজ বাড়িতে কুপিয়ে হত্যা করা হয় ১৩ বছরের এই কিশোরীকে। এরপর আকসেদ আলী থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, ঘটনার দিন রাত ১১টার দিকে দুই স্ত্রী এবং মেয়েকে নিয়ে বসেছিলেন আকসেদ। বাড়ির দিকে হঠাৎ ৫০-৬০ জনকে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আসতে দেখে দুই স্ত্রী তাকে পালিয়ে যেতে বলেন। আকসেদ আলী পালিয়ে গেলে প্রতিপক্ষরা তার ১৩ বছরের কিশোরীকে কুপিয়ে হত্যা করে চলে যায়। এই মামলায় প্রতিপক্ষ মোল্লা বংশের ২০ জনকে আসামি করা হয়। মামলাটি প্রথমে থানা পুলিশ এবং পরে ডিবি পুলিশ তদন্ত করে। ডিবি পুলিশ ২০০৪ সালেরই ৩০ নভেম্বর ২০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে। এরপর রাজশাহীর জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন আদালতে মামলার বিচার শুরু হয়। দীর্ঘ দিন বিচার চলার পর আদালতের মনে হয় মামলার আসামিরা ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। এ মামলার পুনঃতদন্ত হওয়া প্রয়োজন।

আরও পড়ুনঃ  বাগমারা জামায়াতের উদ্যোগে জুলাই-আগস্টের শহীদ,আহত ও পুঙ্গুদের স্মরণে দোয়া মাহফিল

এরপর গত বছরের মে মাসে আদালত মামলাটি পুনঃতদন্ত করতে পিবিআইকে নির্দেশ দেন। রাজশাহী পিবিআইয়ের উপপরিদর্শক (এসআই) খায়রুল ইসলাম মামলাটি তদন্ত করেন। প্রকাশ্যে ও গোপনে তদন্তে পিবিআই জানতে পারে, প্রতিপক্ষরা নয়, আকসেদ আলীই নিজের মেয়েকে হত্যা করেছিলেন। এরপর তার দুই স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তারা সবকিছুই স্বীকার করেন। তারা আদালতে বলেছেন, স্বামীর ভয়ে তারা এ নিয়ে মুখ খুলতে পারেননি।

পুলিশ কর্মকর্তা আবুল কালাম আযাদ বলেন, আদালতে এ মামলার পুরনো ডকেট পাওয়া যায়নি। পিবিআই নিজেদের মতো করেই তদন্ত করেছে। এই ঘটনার সঙ্গে আকসেদ ছাড়া অন্য কেউ জড়িত ছিলেন সে রকম কোন তথ্য পায়নি পিবিআই। আকসেদ আলী ২০০৯ সালে মারা যাওয়ায় মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করা যাবে না। একটি তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হবে। তারপর আদালত এই মামলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।

আরও পড়ুনঃ  পবিত্র আশুরা উপলক্ষ্যে আরএমপি' র গণবিজ্ঞপ্তি

ডিবি পুলিশ ও পিবিআইয়ের তদন্তের ফলাফল পুরোপুরি সাংঘর্ষিক হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে খটকা লেগেছিল যে, বাড়িতে ৫০-৬০ জন হামলা করে শুধুমাত্র ১৩ বছরের একটা মেয়েকে কেন হত্যা করল? এটা তদন্ত করতে গিয়ে দেখা গেছে, সে রকম কোন ঘটনাই ঘটেছিল না। এখন সবার কাছে সবকিছু ধরা পড়বে এমনটি না। ডিবি পুলিশ যা পেয়েছে, পিবিআই তা পায়নি। এমনও হতে পারে যে পিবিআই যা পাচ্ছে, অন্য কোন তদন্ত সংস্থা তা পাচ্ছে না। অন্য কোন তদন্ত সংস্থা এর চেয়েও বেশি কিছু পেতে পারে।’

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল সময়ের কথা ২৪ লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন somoyerkotha24news@gmail.com ঠিকানায়।