অনলাইন ডেস্ক : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচন আগামীকাল বৃহস্পতিবার। ৩৩ বছর পর হতে যাচ্ছে এ নির্বাচন। শুধু নেতৃত্ব বাছাই নয়-এ নির্বাচন যেন শিক্ষার্থীদের অধিকার, স্বপ্ন আর ভবিষ্যতের প্রতিচ্ছবি হয় সেটাই প্রত্যাশা শিক্ষার্থীদের।
বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) জাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ।
বহুল প্রতীক্ষিত জাকসু নির্বাচন ঘিরে ক্যাম্পাসজুড়ে তাই উৎসবের আমেজ বইছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জাহাঙ্গীরনগরে এখন শুধুই প্রত্যাশা আর আলোচনা ঝড়।
গতকাল মঙ্গলবার ভোটের প্রচারণার শেষদিন পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছাতে দিনরাত ছুটেছেন প্রার্থীরা।
৫ সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত নির্বাচন কমিশন এরইমধ্যে প্রার্থীদের সঙ্গে একাধিক বৈঠকও করেছেন। তবে ওএমআর পদ্ধতিতে ভোট গণনা ও অতিরিক্ত ব্যালটের বিষয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রার্থীরা। অন্যদিকে প্রার্থীদের নির্বাচনী ইশতেহারে ক্ষোভ ঝেড়েছেন ভোটাররা।
২১টি ভোটকেন্দ্রে ভোট দেবেন প্রায় ১২ হাজার শিক্ষার্থী। নিয়োগ করা হয়েছে ৬৭ জন পোলিং অফিসারসহ ২১ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা। নির্বাচনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ কমিটির পাশাপাশি থাকবে পুলিশ, র্যাব, আনসার ও সেনাবাহিনী।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে ভোট গ্রহণ চলবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।
নির্বাচনী প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টোরিয়াল বডির তত্ত্বাবধানে এরইমধ্যে প্রার্থীদের ডোপ টেস্ট কার্যক্রমও সম্পন্ন হয়েছে। ভোট গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১টি হলে স্থাপন করা হয়েছে বুথ। নিরাপত্তার স্বার্থে বুথগুলোর পাশেই যুক্ত করা হয়েছে অতিরিক্ত সিসিটিভি ক্যামেরা। এছাড়া নির্বাচনের দিন তাৎক্ষণিক অভিযোগ নিষ্পত্তিতেও গঠন করা হয়েছে বিশেষ কমিটি।
যাদের ছাত্রত্ব শেষ নিরাপত্তার স্বার্থে এদিন বেলা ১২টার মধ্যে তাদের হল ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। জাকসু নির্বাচনে ভোট দেবেন নির্বাচনে ভোটার ১১ হাজার ৯১৯ জন। ভোটারের ৪৮ দশমিক ৮ শতাংশ ছাত্রী। সুষ্ঠু ভোটিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ২১ জন অধ্যাপকের সমন্বয়ে গঠন করা হয়েছে মনিটরিং টিম। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সেনাবাহিনীর পাশাপাশি থাকবে পুলিশ, র্যাব ও আনসার বাহিনী।
কেন্দ্রীয় সংসদে ২৫ পদে লড়ছেন ১৭৭ জন। হল সংসদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪৪৫ জন। কেন্দ্রীয় সংসদে ভিপি পদে ৯ ও জিএস পদে লড়ছেন আটজন। শেষ মুহূর্তে জিএস পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দা অনন্যা ফারিয়া। অন্যদিকে হাইকোর্টের আদেশে প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ার পর চেম্বার আদালতে এ রায় স্থগিত হওয়ায় নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না সম্প্রীতির ঐক্য প্যানেলের ভিপি প্রার্থী অমর্ত্য রায়।
বুথ ২২৪টি, নিরাপত্তায় পুলিশ-আনসার
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, জাকসু নির্বাচনে বিভিন্ন হলে ২২৪টি বুথ বসানো হবে। ব্যালট পেপারে টিক চিহ্নের মাধ্যমে ভোট দিতে হবে। প্রতি ২০০ ব্যালট পেপারের জন্য একটি বাক্স থাকবে। কেন্দ্রীয় সংসদ ও হল সংসদের ব্যালট বাক্স আলাদা করে চিহ্নিত থাকবে। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য ৬৭ জন পোলিং এজেন্ট এবং ৬৭ জন সহকারী অফিসার কেন্দ্রগুলোতে উপস্থিত থাকবেন, যারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২টি গেটে এক হাজারের বেশি পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবেন। ভোটকেন্দ্রে নিরাপত্তার জন্য আনসার মোতায়েন করা হবে।
দুই হলে হবে না, হল সংসদের ভোট
হল সংসদ নির্বাচনে বেগম সুফিয়া কামাল হল ও নওয়াব ফয়জুন্নেছা হলে সব প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন। এই দুই হলে শুধু কেন্দ্রীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে। বেগম সুফিয়া কামাল হলে ১৫ পদের ১০টিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন, বাকি পাঁচ পদ শূন্য রয়েছে। নওয়াব ফয়জুন্নেছা হলে ১৫ পদের ছয়টিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন প্রার্থীরা, বাকি ৯টি পদ শূন্য রয়েছে।
প্রার্থীদের ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক-
মঙ্গলবার (০৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে কেন্দ্রীয় ও হল সংসদের প্রার্থীদের ডোপ টেস্ট করা হয়। কেন্দ্রীয় সংসদের ১৬৩ জন ও হল সংসদের ৪০৩ জন পরীক্ষার নমুনা দিয়েছেন। বাধ্যতামূলক করা হলেও ৫৬ প্রার্থী নমুনা দেননি।-ইত্তেফাক