হেলাল উদ্দীন,বাগমারা : দপ্তরে ঢুকে সরকারি কর্মকর্তাদের লাঞ্ছিত করা ও সাংবাদিকের ফোন কেড়ে নেওয়ার নেতৃত্ব দেওয়া রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার আউচপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ডিএম শাফিকুল ইসলাম ওরফে শাফিকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়াও উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা থানায় বিএনপি নেতা শাফিকুল ইসলাম ও ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকা তাঁর সমর্থকদের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি করেছেন। ডিএম শাফিকুল ইসলাম উপজেলার আউচপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও বিএনপির উপজেলা শাখার আহ্বায়ক ডিএম জিয়াউর রহমানের ছোট ভাই।
রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাইদ চাঁদ, যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম মার্শাল ও সদস্য সচিব বিশ্বনাথ সরকারের স্বাক্ষর করা এক বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের সুনির্দিষ্ট অভিযোগেরে প্রেক্ষিতে ডিএম শাফিকুল ইসলামকে আউচপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও দলের সকল পর্যায়ের পদ থেকে সাময়িক ভাবে বহিষ্কার করা হলো।
বহিষ্কারের অনুলিপি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ দায়িত্বশীল রাজশাহী বিভাগ ও উপজেলার আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবকে দেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়নি।তবে দলের রাজশাহীর বিভাগের দায়িত্বশীল এক নেতা বলেন, সরকারি কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত এবং সাংবাদিকের মুঠোফোন ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ আসার পর তা দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত করে সোমবার রাতেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিএনপির উপজেলা শাখার সদস্য সচিব কামাল হোসেন বহিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এছাড়াও মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক নবী নওয়াজেস আমিন বাদী হয়ে বাগমারা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। ঘটনার বিবরণ দিয়ে চেয়ারম্যানসহ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের নাম উল্লেখ করে সাধারণ ডায়েরি করেন।
জানা যায়, সোমবার (১৮ আগস্ট) দুপুরে দলীয় লোকদের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার(পরিবেশক) নিয়োগের দাবিতে ও ভূয়া ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণের অভিযোগ এনে উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক ও পরিদর্শককে লাঞ্ছিত করেন বিএনপি নেতা শাফিকুল ইসলাম ও তাঁর অনুসারীরা। এই ঘটনার ভিডিও ধারণ করতে গিয়ে প্রথম আলোর প্রতিনিধির মুঠোফোন কেড়ে নেন তারা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওইদিন দুপুরে আউচপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা ডিএম শাফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে ১৫-২০ জনের একটি দল উপজেলা পরিষদে আসেন। তাঁর অনুসারী ১৫-২০ জন উপজেলা কমপ্লেক্সের চারতলায় উঠে উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রকের কক্ষে যান। খাদ্য নিয়ন্ত্রক পরিস্থিতি বুঝতে পেরে পাশের উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দপ্তরে আশ্রয় নেন। সেখানে গিয়ে খাদ্য কর্মকর্তার সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। তাঁকে অশ্লীল ভাষায় গালাগালসহ শারীরিক ভাবে লাঞ্ছিত করা হয়। তাঁকে উদ্ধারে আসা খাদ্য পরিদর্শকে গলা টিপে ধরা হয়। এসময় প্রথম আলোর প্রতিনিধি মুঠোফোনে ভিডিও ধারণ করতে গেলে তা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। পরে তা সাংবাদিককে ফেরত দেওয়া হয়েছে। ঘটনা প্রসঙ্গে উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক খাদ্য নিয়ন্ত্রক নবী নওয়াজেস আমিন জানান, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতয়া পরিবেশক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেন। তবে আগের পরিবেশকরা উচ্চ আদালতে মামলা করলে কার্যক্রমটি স্থগিত হয়ে যায়। এই বিষয়টি চেয়ারম্যান ও তাঁর লোকজনদের বোঝানোর চেষ্টা করা হয়। তবে তাঁরা আগের পরিবেশকদের বাদ দিয়ে নিজেদের অনুগত লোকদের নিয়োগের দাবি করে। অফিস কক্ষে ঢুকে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটিয়েছে। উর্ধতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।
আউচপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা ডিএম শাফিকুল ইসলাম লোকজন নিয়ে উপজেলা পরিষদে আসার কথা স্বীকার করে বলেন, ঘটনার সময় আমি নিচে ছিলাম, পরে উপরে গিয়ে ছেলেপেলেদের সরিয়ে এনেছি।’ তিনি অভিযোগ করেন, তাঁর স্বাক্ষর জাল করে দুই পরিবেশক শামীম আল মামুন ও শাহাদাত হোসেন ভূয়া ট্রেড লাইসেন্স জমা দিয়েছেন। খাদ্য কর্মকর্তা এটা গ্রহণ করেছেন। এটা জানার জন্য লোকজন নিয়ে এসেছিলেন। তবে তিনি এই অনাকাঙ্খিত ঘটনার জন্য উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা ও সাংবাদিকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন। দল থেকে বহিষ্কারের বিষয়টি জেনেছেন বলে জানান।
এ ব্যাপারে রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাইদ চাঁদ এর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ঘটনা সত্যতা স্বীকার করে বলেন, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে তাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।
বাগমারা থানার ওসি তৌহিদুল ইসলাম খাদ্য নিয়ন্ত্রকের জিডির কথা স্বীকার করে বলেন, এখন আইনি প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়াও চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে হামলা, ভাঙচুর ও মারামারির অভিযোগে একাধিক মামলা রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন।
উল্লেখ্য এর আগে বিভিন্ন দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির কারণে চেয়ারম্যান ডিএম শাফিকুল ইসলামকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। উচ্চ আদালতে মামলা করে কয়েক মাস আগে তা ফেরত পান। গত বছরের ৫ আগস্টের পর বড়ভাই বিএনপির সভাপতি ডিএম জিয়াউর রহমানের দাপটে তিনি বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।