স্টাফ রিপোর্টার, দুর্গাপুর: রাজশাহীর দুর্গাপুরে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি, দখলবাজি এবং আওয়ামী লীগের চিহ্নিত দোসরদের পুনর্বাসনের অভিযোগে উপজেলা ও পৌর বিএনপির একাংশের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) বিকেলে উপজেলা মডেল মসজিদের সামনে এ প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশের আগে পৌর সদর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। এতে উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে আগত কয়েক হাজার নেতা-কর্মী ও সাধারণ জনগণ অংশ নেন।
প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আয়নাল হক। প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও প্রবীণ নেতা বাবলুর রহমান। প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক চেয়ারম্যান হাসান ফারুক ইমাম সুমন।
প্রধান বক্তা হাসান ফারুক ইমাম সুমন বলেন, “বিএনপির কিছু নেতা দলের দুঃসময়ে কেন্দ্র ঘোষিত কোনো কর্মসূচি বা আন্দোলনে অংশ নেননি। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে আতাত করে চলেছেন। এখন সেই একই ব্যক্তিরা এলাকায় চাঁদাবাজি ও দখলবাজিতে লিপ্ত হয়েছেন। মনে রাখবেন, বিএনপির প্রকৃত ত্যাগী কর্মীরা এসব অপকর্ম কখনোই মেনে নেবে না।”
তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, “দুর্গাপুরের সুসংগঠিত বিএনপিকে আওয়ামী লীগের দোসর আব্দুস সাত্তারের টাকার কাছে বিক্রি করে দলকে বিভক্ত করেছেন কিছু নেতা। ওই আব্দুস সাত্তার জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় ঢাকার স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা, এমপি ও মন্ত্রীদের অর্থদাতা ছিলেন। এ কারণে তার বিরুদ্ধে কদমতলী থানায় মামলা হয়েছে, যার আসামিদের মধ্যে হাসিনা ও কাদেরসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারাও আছেন।”
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “আপনাদের এখনো সময় আছে আওয়ামী লীগের দোসরদের সঙ্গে আতাত ও চাঁদাবাজি বন্ধ করুন। অন্যথায় দুর্গাপুরের প্রকৃত বিএনপি ঐক্যবদ্ধ হয়ে আপনাদের গণধোলাই দেবে।”
দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে সুমন বলেন, “যারা দলের নাম ভাঙিয়ে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের অর্থে হাইব্রিডদের ইউনিয়ন কমিটিতে স্থান দিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়াতে হবে। সম্প্রতি উপজেলার ছয় ইউনিয়নে অর্থের বিনিময়ে যারা কমিটি ঘোষণা দিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে দলীয় সাংগঠনিক ব্যবস্থা ও বহিষ্কারের দাবি জানাই।”
তিনি ত্যাগী নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থেকে দলে অনুপ্রবেশকারীদের প্রতিহত করার আহ্বান জানান।
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন পৌর বিএনপির সদস্য সচিব আহমেদ রেজাউল হক স্বপন, পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি বজলুর রশিদ, উপজেলা বিএনপির সদস্য ও পৌর মেয়র নির্বাচনে দলীয় মনোনীত প্রার্থী জার্সিস হোসেন সোহেল প্রমুখ। সভা সঞ্চালনা করেন জেলা যুবদলের সদস্য মাহবুব রহমান।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা যুবদল ও ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি নাহিদুল হক বিদয়, বিএনপি নেতা মিরুন কমিশনার, জেলা যুবদলের সদস্য মাসুদ রানা মাসুম, রেন্টু, যুবদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদ হাসান তালুকদার, স্বেচ্ছাসেবক দলের জেলা সদস্য ও পৌর শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিলন হোসেন, জেলা ছাত্রদলের সদস্য পারভেজ আহমেদ পলাশ, পৌর ছাত্রদলের সদস্য সচিব এসএম সাকিব হাসান, যুগ্ম আহ্বায়ক ফায়সাল আহমেদ শান্ত ও সদস্য সাগর আলীসহ দলের বিভিন্ন স্তরের শতাধিক নেতা-কর্মী।
প্রতিবাদ সমাবেশে বিএনপির ত্যাগী, প্রবীণ ও সাবেক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতৃবৃন্দ ছাড়াও বিগত ১৫ বছরে ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া, রাজনৈতিক মামলায় জেল-জুলুম ও নির্যাতনের শিকার শতাধিক কর্মী অংশ নেন। তারা অর্থের বিনিময়ে অনুমোদিত ইউনিয়ন কমিটির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে দায়ীদের বহিষ্কারের দাবি জানান।