নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

বাংলাদেশ সোমবার। রাত ১২:১২। ১০ নভেম্বর, ২০২৫।

বিশ মাসেও শেষ হয়নি ভবন, টিনের চালা ও ভাঙা বেঞ্চে পাঠদান 

নভেম্বর ৯, ২০২৫ ৮:৫৫
Link Copied!

পিন্টু আলী, চারঘাট : রোববার (৯ নভেম্বর) দুপুর ১টা। বিদ্যালয়ে একজন শিক্ষার্থীও উপস্থিত নেই, পতাকাও টাঙানো হয়নি। অফিস রুমে বসে আছেন একজন শিক্ষক ও একজন অফিস সহকারী। পাশের রুমে রাখা হয়েছে নতুন ভবনের নির্মাণ সামগ্রী। ক্লাসরুম বলতে টিন দিয়ে ঘিরে চারটি ছোট ছোট খোপের মত ঘর তৈরি করা হয়েছে। সেখানে নেই পর্যাপ্ত বসার জায়গা। অধিকাংশ বেঞ্চ ও চেয়ার-টেবিল ভাঙা অবস্থায় পড়ে আছে। দেখে বোঝার উপায় নেই এটা কোনো মাধ্যমিক বিদ্যালয়।

এমন বেহাল দশা রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার বাসুদেবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের। বিদ্যালয়টিতে ১ কোটি ১৯ লাখ টাকা ব্যয়ে তিনরুম বিশিষ্ট একতলা ভবনের নির্মাণ কাজ চলছে। নতুন ভবন নির্মাণ করতে গিয়ে পুরনো ক্লাসরুমগুলো ভেঙে ফেলা হয়েছে। ১২ মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও দীর্ঘ ২০ মাসেও কাজ শেষ করেনি ঠিকাদার। আবেদন করে ডিসেম্বর পর্যন্ত কাজের সময় আাবরও বাড়ানো হয়েছে। ফলে টিনের চালা তুলে চলছে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাকার্যক্রম। এতে একদিকে শিক্ষার পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে, অন্যদিকে কমছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা।

শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগ, ক্লাস চালু রাখার বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না করেই ক্লাসরুম ভেঙে ফেলা হয়েছে। যে টিনের চালা তোলা হয়েছে সেখানে ভাঙা বেঞ্চে ক্লাস করার পরিবেশ নেই। বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নতুন ভবনের কাজ শেষ করার বিষয়ে কোনো তাগাদাও দিচ্ছেনা কিংবা মাঠে পর্যাপ্ত জায়গা থাকলেও বিকল্প ব্যবস্থা নিচ্ছেনা। বরং শিক্ষার্থীরা কম আসছে এ সুযোগে তারাও নিজেদের খেয়ালখুশি মত কখনও বিদ্যালয়ে আসছেন, কখনও আসছেন না।

আরও পড়ুনঃ  টিকটকে প্রেম, তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগে যুবক গ্রেফতার

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর রাজশাহী সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৯ সালে বাসুদেবপুর উচ্চ বিদ্যালয় নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়ে ১২ জন শিক্ষক ও আড়াই শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। এর আগে বিদ্যালয়টিতে দুটি পাকা টনের একতলা ভবনে শিক্ষা কার্যক্রম চলছিল। এর মধ্যে একটি ভবন ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে।

২০২৩ সালের ডিসেম্বরে চারতলা বিশিষ্ট তিনরুমের একতলা ভবন, পয়ঃনিষ্কাশন ও পানি সরবরাহ ব্যবস্থার কাজের অনুমোদন দেয় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। ১ কোটি ১৯ লাখ ১২ হাজার টাকা ব্যয়ে কাজের দায়িত্ব পায় বাঘা ফার্নিচার মার্ট নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। চুক্তি অনুযায়ী কাজের সময়সীমা ১২ মাস বেঁধে দেওয়া হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি ২০ মাসেও কাজ শেষ করতে পারেনি। ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়িয়ে নিলেও নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করা সম্ভব হবেনা বলছে সংশ্লিষ্টরা।

৯ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মনিরুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়ে এখন একটি ভবনের তিনটি রুম ভাল আছে। একটিতে অফিস, অন্যটি মেয়েদের কমনরুম ও আরেকটিতে ঠিকাদারের নির্মাণ সামগ্রী রাখা হয়েছে। অথচ ওই রুমটি ফাঁকা থাকলেও আমরা ক্লাস করতে পারতাম। ঠিকমত ক্লাস না হওয়ায় আমরা অনেক পিছিয়ে যাচ্ছি।

আরও পড়ুনঃ  সেনাবাহিনীর সদস্যদের মাঠ থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে না : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

উম্মে কুলসুম নামে এক শিক্ষার্থী জানায়, টিনের বেড়া ও চালা দিয়ে ছোট ছোট রুম করা হয়েছে। বসার মত উপযুক্ত পরিবেশ নেই, তীব্র গরমে ফ্যানও নেই। একপাশে ক্লাস চললে শব্দের কারণে আরেক পাশের শিক্ষার্থীরা শুনতে পায় না। এজন্য ক্লাসে তেমন কেউ আসেনা। দীর্ঘদিন ধরে আমরা এত কষ্ট করছি কিন্তু কোনো প্রতিকার নাই।

৮ শ্রেণীতে পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক মোজাম্মেল হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার বিষয়ে যদি শিক্ষকদের নূন্যতম দায়িত্ববোধ থাকতো তবে বিকল্প ব্যবস্থা না করে ক্লাসরুম ভাঙতোনা। এক বছরের বেশি সময় ধরে এ অবস্থা চললেও তারা তেমন তাগাদা দিচ্ছেনা। ক্লাস না হওয়ায় নিজেরা খেয়ালখুশি মত আনন্দে দিন পার করছেন। যে অবস্থায় কাজ আছে আগামী ছয় মাসেও শেষ হবেনা।

এ বিষয়ে বাসুদেবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ফৌজিয়া খাতুন বলেন, আমরা তাগাদা দিচ্ছিনা কথাটা সঠিক না। শিক্ষার্থীরা রোদ গরমে খোলা পরিবেশে ক্লাস করতে পারছেনা এজন্য দ্রুত ভবনের কাজ শেষ করার বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসকেও জানিয়েছি। যেদিন পতাকা টাঙানো ছিলনা আর শিক্ষকরা ছিলনা সেদিন হয়তো আগেই পতাকা নামিয়ে ফেলা হয়েছিল। আর আমি একটু বাইরে ছিলাম সেজন্য কিছু শিক্ষকও হয়তো আগে চলে গেছে।

আরও পড়ুনঃ  ভিএপিটি অডিট করে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে নির্দেশ ইসির

ঠিকাদার বাঘা ফার্নিচার মার্টের টুটুল আলী বলেন, আমরা নিয়ম অনুযায়ী কাজ শেষ করার চেষ্টা করছি। কিন্তু সেখানে পুরনো ভবনের পাশে গাছপালা থাকায় ভাঙতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। এছাড়াও অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণেও কাজে বিঘ্ন হয়েছে। তবে বর্ধিত সময়ে কাজ শেষ হয়ে যাবে।

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী রায়হান সোবহান বলেন, বিদ্যালয়ের কাজের বিষয়টি আমরা গুরুত্ব সহকারে দেখছি। ঠিকাদারকে প্রতিনিয়ত তাগাদা দেওয়া হচ্ছে। ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ না হলে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

চারঘাট উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার মোঃ রাহেদুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়ে ভবন নির্মাণ কাজের অযুহাতে পাঠদান না চলার কোনো সুযোগ নেই। পতাকা উত্তোলন না থাকা ও শিক্ষকদের উপস্থিতির বিষয়টিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর ভবনের নির্মাণকাজ দ্রুত শেষ করার বিষয়েও নিযমিত খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল সময়ের কথা ২৪ লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন somoyerkotha24news@gmail.com ঠিকানায়।