নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

বাংলাদেশ মঙ্গলবার। দুপুর ১২:৫৬। ২৫ নভেম্বর, ২০২৫।

ভোক্তাদের অধিকার আদায়ে ঢাল হয়ে কাজ করবে ক্যাব’

নভেম্বর ২৪, ২০২৫ ১১:৪৫
Link Copied!

স্টাফ রিপোর্টার : ভোক্তাদের অধিকার রক্ষায় মাঠপর্যায়ে আরও শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে চায় কনজুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। দুর্নীতি, বাজারে সিন্ডিকেট বিরোধী অভিযান, স্বাস্থ্যসেবা, কৃষিপণ্য, খোলা ভোজ্যতেল ও খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণ—সবক্ষেত্রে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ‘ঢাল’ হয়ে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছেন ক্যাবের সভাপতি এএইচএম সফিকুজ্জামান। তিনি বলেন, “আমরা সরকারের মুখপাত্র নই, জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে সহযোগী ভূমিকায় থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলব।”সোমবার (২৪ নভেম্বর) সকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ক্যাব রাজশাহীর উদ্যোগে আয়োজিত বিভাগীয় খাদ্য সমৃদ্ধকরণ ও ভোক্তা অধিকার শীর্ষক দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। গেইন ফুড সার্টিফিকেশন প্রকল্পের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত এই প্রশিক্ষণে রাজশাহী বিভাগের সকল জেলার ক্যাব নেতারা অংশ নেন।

বাজারে খোলা ড্রামে ভোজ্যতেল বিক্রি বন্ধে ক্যাব আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখবে বলে মন্তব্য করেন ক্যাবের সভাপতি এএইচএম সফিকুজ্জামান। তিনি বলেন,“খোলা ভোজ্যতেল বিক্রি ভোক্তার জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এতে ভেজাল, নিম্নমান বা নকল তেল মিশ্রণের প্রবণতা বাড়ে। তাই ভোক্তা পর্যায়ে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি ব্যবসায়ীদেরও নিয়ম মেনে প্যাকেটজাত তেল বিক্রিতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।”

তিনি আরও বলেন,“বাজারে খাদ্যপণ্যের মান নিশ্চিত করতে ভোক্তা অধিদফতর, বিএসটিআই, কৃষি বিভাগ, ওষুধ প্রশাসনসহ বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে। কিন্তু শুধু সরকারি প্রতিষ্ঠানের ওপর দায়িত্ব চাপিয়ে দিলে হবে না; জনগণের সংগঠন হিসেবে ক্যাবকেও সমানভাবে এগিয়ে আসতে হবে। খোলা তেল বিক্রির বিরুদ্ধে আমরা মাঠপর্যায়ে মনিটরিং, প্রচারণা ও জনসচেতনতার কর্মসূচি বাড়াবো।”

আরও পড়ুনঃ  বাংলাদেশে রপ্তানির জন্য নিজ দেশ থেকে টেন্ডারে চাল কিনছে পাকিস্তান

কৃষকদের প্রকৃত সমস্যার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন,“কৃষিঋণ প্রকৃত কৃষকের হাতে পৌঁছায় কি না সেটি তদন্ত করা জরুরি। রাজশাহীতে একটি নির্দিষ্ট সিন্ডিকেট ঋণ বিতরণ নিয়ন্ত্রণ করছে। ফলে প্রকৃত কৃষক ঋণ পাচ্ছেন না; বরং উঁচু সুদে দাদন নিয়ে চাষাবাদ করতে বাধ্য হচ্ছেন।”

তিনি আরও বলেন,“এই অঞ্চলে আলুর বাজারে বিশৃঙ্খলা, ভেজাল বীজ, সার সিন্ডিকেট, পরিবহনে চাঁদাবাজি—এসব সমস্যা দীর্ঘদিনের। ক্যাব সদস্যরা শুধু পরিচয় দিয়ে ডিসির সঙ্গে বৈঠক করলে হবে না, মাঠপর্যায়ে সক্রিয় হতে হবে।”

নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিতিশীলতার কারণ তুলে ধরে ক্যাবের সভাপতি সফিকুজ্জামান আরও উল্লেখ করেন, “নিত্যপণ্যের বাজারে সিন্ডিকেট ভাঙাটা অত্যন্ত কঠিন। চার-পাঁচটি বড় করপোরেট গ্রুপের পাশাপাশি অসংখ্য অদৃশ্য শক্তি কাজ করছে। শত শত মানুষের জড়িত থাকায় বাজার নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়েছে। সঠিক ব্যবস্থা না নিলে দালালচক্র ও আড়তদারের আধিপত্য কমবে না।”

বাজার মনিটরিংয়ের পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবায় অনিয়ম—বিশেষ করে ভেজাল ওষুধ, মেয়াদোত্তীর্ণ শিশু খাদ্য বিক্রি, অতিরিক্ত মূল্য আদায়—এসব বিষয়ে নজরদারি বাড়াতে ক্যাবকে আরও সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন,“ফার্মেসিগুলোতে সচেতনতা বৃদ্ধি জরুরি। জনগণকে জানাতে হবে তারা কোন ক্ষেত্রে প্রতারিত হচ্ছেন।”

আরও পড়ুনঃ  পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে ২২ হাজার ৭০০ প্রবাসীর নিবন্ধন

আগামী জাতীয় নির্বাচনের সময় নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর প্রবণতার বিষয়ে সতর্ক করে দিয়ে ক্যাব সভাপতি বলেন,“ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফার লোভে পণ্যের দাম বাড়াতে পারেন। বাজারকে স্থিতিশীল রাখতে জেলা প্রশাসন এবং ক্যাবকে একযোগে মনিটরিং জোরদার করতে হবে।”

সরকারি চাকরিজীবনের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন,“আমি সরকারে ছিলাম, তখন অনেক বাধ্যবাধকতা ছিল। এখন আর কোনো বাধা নেই। ক্যাবের মাধ্যমে মানুষের অধিকার নিয়ে দৃঢ়ভাবে কাজ করতে চাই।”

দিনব্যাপী প্রশিক্ষণে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার ড. আ.ন.ম. বজলুর রশীদ। তিনি বলেন,“ক্যাব জনস্বার্থে কাজ করছে বলেই তাদের প্রতিবেদন ও সুপারিশ জনগণ খুব দ্রুত বিশ্বাস করে। ভোক্তার অধিকার, খাদ্যপণ্যের নিরাপত্তা ও বাজারের স্বচ্ছতা নিয়ে ক্যাব যে তথ্য সংগ্রহ করে, তা সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।”

তিনি আরও বলেন,“এটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হলেও সরকারি সংস্থাগুলোর সহযোগী শক্তি হিসেবে মাঠপর্যায়ে কাজ করছে। ভোক্তা অধিদফতর, বিএসটিআই, কৃষি বিভাগ, ওষুধ প্রশাসন—এসব প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ক্যাব যুক্ত হলে ভোক্তা সুরক্ষা কার্যক্রম আরও শক্তিশালী হয়।” রাজশাহী জেলা ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুনের সঞ্চালনায় খাদ্যের গুণগত মান নিয়ে পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপন করেন, গেইন এর প্রকল্প সমন্বয়কারী লাইলুন নাহার।

আরও পড়ুনঃ  রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরাতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের প্রস্তাব গৃহীত

সমাপনী বক্তব্যে জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার বলেন, “আমরা প্রত্যেকেই ভোক্তা, তাই নিজের স্বার্থ রক্ষায় আমাদের সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেতন হতে হবে। বাজারে অসাধু ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য রোধে শুধু সরকারি পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়; সাধারণ মানুষকে সচেতন হতে হবে এবং অসঙ্গতি দেখলে অভিযোগ জানাতে হবে।”তিনি আরও বলেন, “ভোক্তার স্বার্থ ও স্বাস্থ্য রক্ষায় সরকারের পাশাপাশি ক্যাব মাঠপর্যায়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। খাদ্যের মান নিশ্চিত করা থেকে শুরু করে বাজার মনিটরিং, ভেজালবিরোধী প্রচারণা—এসব কার্যক্রমকে আরও শক্তিশালী করতে ক্যাবের কাজ সরকারি দপ্তরগুলোর পরিপূরক হিসেবে কাজ করছে।”

প্রশিক্ষণে রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন দফতরের সরকারি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি বিভাগের ৮ জেলা—রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া, জয়পুরহাট, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ—থেকে ক্যাবের সভাপতি, সম্পাদক ও সদস্যরা অংশ নেন। সরকারের বিভিন্ন দফতরের প্রতিনিধিরাও প্রশিক্ষণে অংশ নিয়ে খাদ্যের মান, যাচাই-বাছাই, বাজার মনিটরিং এবং ভেজাল প্রতিরোধে সরকারি-বেসরকারি সমন্বয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল সময়ের কথা ২৪ লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন somoyerkotha24news@gmail.com ঠিকানায়।