অনলাইন ডেস্ক : মধ্যপ্রাচ্যের আরব উপদ্বীপের হৃদস্পন্দন সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদ বিশ্বে এখন আভিজাত্যের নতুন উদাহরণ। শহরটির আধুনিকতা মিশেছে লোহিত সাগরের শান্ত ও মোহনীয় সৌন্দর্যের সঙ্গে। বিলাসবহুল নগরীর চোখ ধাঁধানো স্থাপত্য থেকে শুরু করে সমুদ্রতীরের নিরিবিলি অবসর—সৌদি আরব এখন একসঙ্গে আভিজাত্য, উদ্ভাবন এবং আরবীয় আতিথেয়তার এক অসাধারণ প্রতিচ্ছবি।
বাংলাদেশের যেসব ভ্রমণপিপাসু রয়েছেনে তাদের জন্য রিয়াদ হতে পারে অনন্য স্থান। রিয়াদ আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি উৎসবমুখর ও ভিন্ন প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর। আপনি শহরটির যেখানেই যান না কেন, চারপাশের সবকিছুই আপনার প্রাণ ছুঁয়ে যাবে।
আর যারা ধর্ম নিয়েও ভাবছেন তারা রিয়াদ ঘুরে দেখার আগে বা পরে ওমরাহ করতে মক্কায় যেতে পারবেন। এতে করে ওমরাহ পালনও হলো আবার রিয়াদের সৌন্দর্য্যও দেখা হলো। এমন সুযোগ পৃথিবীর অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো সৌদির যেকোনো ধরনের ভিসা নিয়েই ওমরাহ করা যায়।
বুলেভার্ড রিয়াদ সিটি
সৌদির রাজধানীর কেন্দ্রবিন্দু হলো বুলেভার্ড রিয়াদ সিটি। যেখানে ফ্যাশন, খাবার এবং সংস্কৃতির সবকিছু ‘এক ছাদের’ নিচেই পাওয়া যাবে।
বিলাসবহুল বুটিক, চমৎকার রেস্তোরাঁ ও বিনোদন স্থানে ভরপুর বুলেভার্ড রিয়াদ সিটি এমন এক শহর যেখানে আধুনিকতার ছোয়া লাগলেও শহরটি নিজের ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছে।
রিয়াদ সিজন
রাজধানী রিয়াদ সবচেয়ে বেশি প্রাণবন্ত থাকে দেশটির প্রধান উৎসব ‘রিয়াদ সিজন’ চলাকালীন। এই উৎসব রাজধানী শহরকে শিল্প, ফ্যাশন ও বিনোদনের এক বিশাল মঞ্চে পরিণত করে।
এখানে রয়েছে ১৪টি বিশেষ থিমের জোন। যারমধ্যে বুলেভার্ড ওয়ার্ল্ড, কিংডম এরিনা, এবং আল সুওয়াইদি পার্ক উল্লেখযোগ্য। প্রতিটি জোনেই থাকে কনসার্ট, ফ্যাশন ডিজাইনারদের প্রদর্শনী, আন্তর্জাতিক মানের খাবার ও অসাধারণ সব বিনোদনমূলক আকর্ষণ।
যারা একটু বেশি উপভোগের সুযোগ চান তাদের দেওয়া হয় রিয়াদ সিজন প্রিমিয়াম পাস। এর মাধ্যমে ভিআইপি প্রবেশাধিকার, ব্যক্তিগত লাউঞ্জ এবং বিশেষ বিলাসবহুল অভিজ্ঞতা পাওয়া যায়। বিশ্বের সব ফ্যাশনপ্রেমীরা ছুটে আসেন ‘বুলেভার্ড রানওয়েতে’। যেখানে পপ-আপ বুটিক এবং লাইভ শোতে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক ডিজাইনারদের সৃষ্টি তুলে ধরা হয়।
চলতি বছরের রিয়াদ সিজন উৎসবের সবচেয়ে বড় চমক ছিল দুই ব্রিটিশ ফ্যাশন আইকন—স্টেলা ম্যাককার্টনি এবং ভিভিয়ান ওয়েস্টউডের উপস্থিতি।
আতিথেয়তার নতুন উচ্চতা
রিয়াদে আতিথেয়তা এখন অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে উন্নত। দ্য রিটজ-কার্লটন রিয়াদ, ফেয়ারমন্ট রিয়াদ, এবং ফোর সিজনস রিয়াদ-এর মতো হোটেলগুলো এখন বিশেষ ‘রিয়াদ সিজন প্যাকেজ’ দিচ্ছে। এসব প্যাকেজে ইসলামি ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানা, সেরা হালাল খাবারের স্বাদ, প্রথাগত সৌদি আতিথেয়তার অভিজ্ঞতা এবং বিশ্বমানের আরাম, বিনোদন ও সাংস্কৃতিক আয়োজন উপভোগের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।
এছাড়া প্যাকেজের আওতায় অতিথিরা দিনের শুরুতে নিজেদের সতেজ করতে পারেন স্পা ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে। গাড়িতে চড়ে বুলেভার্ড রিয়াদ সিটিতে কেনাকাটা এবং মরুভূমিতে খোলা আকাশে লাইভ কনসার্ট বা মোমবাতির আলোয় রাতের খাবার উপভোগ করে কাটাতে পারেন পুরো দিন।
মরুভূমির বালিয়াড়ি পেরিয়ে প্রবাল উপকূল
যারা নগর জীবনের ব্যস্ততা ছেড়ে প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যেতে চান, তারা পশ্চিমে লোহিত সাগরের বিস্তৃতির দিকে যেতে পারেন। যেখানে প্রকৃতি এবং বিলাসিতা এক অভূতপূর্ব ঐকতানে মিলিত হয়েছে। এখানে শহরের কোলাহলের বদলে শোনা যায় ঢেউয়ের মৃদু ধ্বনি।
সৌদি লোহিত সাগরের নতুন রিসোর্টগুলো ‘বেয়ারফুট লাক্সারির’ ধারণাকে নতুনভাবে যেন উপস্থাপন করছে। এগুলোতে প্রবাল প্রাচীর দিয়ে ঘেরা ব্যক্তিগত কটেজ, মরুভূমির পাহাড় দ্বারা পরিবেষ্টিত অবকাঠামো রয়েছে।

