অনলাইন ডেস্ক : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য মিয়া গোলাম পরওয়ার অভিযোগ করেছেন, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, প্রশাসন ও সরকারের কিছু উপদেষ্টার মধ্যে অস্থিরতা বেড়ে চলেছে। তিনি দাবি করেন, দু-একজন উপদেষ্টা একটি নির্দিষ্ট দলকে ক্ষমতায় আনার জন্য গোপনে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন।
শনিবার (১১ অক্টোবর) সকাল ৯টায় পাইকগাছা সরকারি কলেজ মাঠে উপজেলা জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত ছাত্র-যুব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ছাত্র-জনতা অতীতে বিপ্লব করেছে। এবার আমরা সুশাসন, সুবিচার ও ইসলামী মূল্যবোধের পক্ষে বিপ্লব করতে চাই ভোটের মাধ্যমে। আমরা সরকারের প্রতি আস্থা রাখতে চাই। এই সরকার কোনো রাজনৈতিক দলের নয় এমনটাই বলা হয়েছে। আমরাও বলেছিলাম, সরকারকে সহযোগিতা করব। তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) নিজেও বলেছিলেন, আমি দেশ শাসন করতে আসিনি, একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন দিয়ে চলে যাব। কিন্তু এখন দেখছি নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, প্রশাসন ও উপদেষ্টাদের কারো কারো মাঝে অস্থিরতা দেখা দিচ্ছে।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা কর্মকর্তারা (ওসি, ইউএনও, ডিসি, সচিবালয়ের আমলা) মাঝে মাঝে একটি বিশেষ দলের চাপে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন এবং নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে পারছেন না। তিনি বলেন, আমরা কখনো বলিনি আমাদের কথা শুনতে হবে। আমরা বলি, আপনারা ন্যায়, সত্য ও ইনসাফের পথে থাকুন।
পরওয়ার বলেন, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। খেলার মাঠ একপাশে উঁচু, আরেক পাশে নিচু হলে খেলা চলে না। ভোটের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। গোপনে কোনো দলের সঙ্গে বৈঠক, সাহায্য বিতরণ বা পক্ষপাতিত্ব চলতে থাকলে তা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হতে পারে না। সরকারের সচিবালয় ও প্রশাসনের মধ্যে এসব আচরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যা উদ্বেগজনক।
তিনি আরও দাবি করেন, দু-একজন উপদেষ্টাকে দেখা যাচ্ছে একটি দলের সঙ্গে গোপন সম্পর্ক রেখে ভবিষ্যৎ নির্বাচনে তাদের ক্ষমতায় আনতে ষড়যন্ত্র করছেন। অথচ প্রধান উপদেষ্টা আমাদের বলেছেন, তিনি নিরপেক্ষ থাকবেন। আমরা চাই, তিনি তার অবস্থানে অবিচল থাকুন দাঁড়িপাল্লার মতো সোজা। কোনো দিকেই যেন হেলে না পড়েন।
জামায়াতে ইসলামীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, জনগণ যদি আমাদের সুশাসন, সুবিচার এবং আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠার জন্য ভোট দেন, এবং আমরা রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে আসি, তাহলে আমরা শাসক হব না সেবক হবো। আমাদের দলের আমির বারবার এ কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, ২৪-এর গণআন্দোলন ছিল ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার যুদ্ধ। এখন আমাদের দ্বিতীয় যুদ্ধ দুর্নীতির বিরুদ্ধে। এই যুদ্ধে জয়ী হতে ছাত্র-জনতাকে ইসলামী শক্তিকে সংসদে পাঠাতে হবে।
পরওয়ার আরও বলেন, জামায়াত যদি ক্ষমতায় আসে, তবে প্রথম কাজ হবে শিক্ষাব্যবস্থায় সংস্কার এনে সবার জন্য শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করা। দ্বিতীয় কাজ হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা এবং বৈষম্যহীন সমাজ গঠন। একই সঙ্গে সুবিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কুরআনের আইন সংসদে তুলে ধরার অঙ্গীকার করেন তিনি। অবশেষে তিনি দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন পাইকগাছা উপজেলা আমীর মাওলানা সাইদুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও খুলনা-৬ আসনে দলের মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী মাওলানা আবুল কালাম আজাদ এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন পাইকগাছা উপজেলা সেক্রেটারি মো. আলতাফ হোসেন। আরও বক্তব্য দেন খুলনা জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর মাওলানা গোলাম সরোয়ার, সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান, মহানগর ছাত্রশিবির সভাপতি আরাফাত হোসেন মিলন, দক্ষিণ জেলা সভাপতি আবু জার আল গিফারী, মহানগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি এডভোকেট শাহ আলম, জেলা সহকারী সেক্রেটারি মুন্সি মঈনুল ইসলাম, এডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান, অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, গাউসুল আযম হাদী, এডভোকেট শফিকুল ইসলাম লিটন, এডভোকেট লিয়াকত আলী, মাওলানা আমিনুল ইসলাম, অধ্যাপক নূরুজ্জামান মল্লিক, মাওলানা শেখ কামাল হোসেন, কাজী তামজীদ আলম, এডভোকেট আব্দুল মজিদ, অধ্যাপক আব্দুল মোমিন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের উপজেলা সভাপতি মুফতি আহম্মদ আলী, মাওলানা বুলবুল আহম্মদ, মাওলানা আব্দুল খালেক, হাফেজ নূরে আলম সিদ্দিকী, মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, মাওলানা আব্দুল হান্নান, মাওলানা আব্দুস সবুর, পৌরসভা আমীর ডা. আসাদুল হক, সেক্রেটারি মিজানুর রহমান, বাস মালিক সমিতির সহ-সভাপতি ও কাপড় ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি অমরেশ চন্দ্র মণ্ডল, কয়রা-পাইকগাছা উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি এস এ মুকুল, ছাত্রশিবিরের দক্ষিণ থানা সভাপতি তারিক মাহমুদ শিশির, উত্তর থানা সভাপতি খালিদ মাহমুদ রেজা ও হাফেজ সাইফুল ইসলাম।