নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

বাংলাদেশ সোমবার। বিকাল ৩:০৯। ১০ নভেম্বর, ২০২৫।

ডেঙ্গুজ্বরে মৃত্যু তিন অংকে, সতর্কতা জরুরি

আগস্ট ৯, ২০২৩ ৪:৩৬
Link Copied!

ডা. মোহাম্মদ হাসান জাফরী : গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ১৬২৩ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন, যা চলতি বছরে সর্বোচ্চ ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর রেকর্ড। এর মধ্যে ঢাকার সিটির ১১৬৮ জন ও ঢাকা সিটির বাইরে সারা দেশের ৪৫৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ৭ জনের ৪ জন ঢাকা সিটিতে এবং ৩ জন ঢাকা সিটির বাইরে মারা যান। এ নিয়ে এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মোট ১০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। যার মধ্যে ঢাকা সিটির ৭৮ জন এবং ঢাকা সিটির বাইরে সারাদেশ ২২ জন মারা যান। চলতি বছরের ১৫ জুলাই পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ১৯৪৫৪ জন। এর মধ্যে ঢাকা সিটিতে ১৩১০৯ জন এবং ঢাকা সিটির বাইরে সারা দেশে ৬৩৪৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। গত বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা সর্বমোট ৬২৩৮২ জন এবং ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মোট ২৮১ জন মারা যান। ডেঙ্গু মোকাবেলায় মশক নিধন, মশার প্রজননক্ষেত্র ধ্বংস সহ নানাবিধ কর্মসূচির পাশাপাশি এখন আমাদের সময় সচেতনতার, না হলে চরম বিপর্যয়ে পড়বে আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থা।

ডেঙ্গুজ্বরের জন্য দায়ী ফ্ল্যাভিভাইরাসগণের অন্তর্ভুক্ত ডেঙ্গু ভাইরাস বা ডেঙ্গি ভাইরাস। এডিস মশা ডেঙ্গু ভাইরাসসহ ইয়েলো ফিভার ভাইরাস, জিকা ভাইরাস, চিকুনগুনিয়া ভাইরাসেরও বাহক। এই ভাইরাসের ৪ টি সেরোটাইপ পাওয়া গিয়েছে। যাদের প্রত্যেকেই রোগ সৃষ্টি করতে সক্ষম। জীবাণুবাহী এডিস মশা কাউকে কামড়ালে সেই ব্যক্তি ৪ থেকে ৬ দিনের মধ্যে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হতে পারে। এই রোগাক্রান্ত ব্যক্তিকে যদি কোনো জীবাণুবিহীন এডিস মশা কামড়ায় তাহলে সেই মশা ডেঙ্গুজ্বরের জীবাণুবাহী মশায় পরিণত হয়। এই জীবাণুবাহী মশাটি যখন অপর কোনো ব্যক্তিকে কামড়ায় তখন তার দেহে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ে। এভাবে খুব সহজে একজন থেকে অপরের দেহে এ রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। ৩ ধরনের ডেঙ্গু হতে দেখা যায়, ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু ফিভার, ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার ও ডেঙ্গু শক সিনড্রোম।

সাধারণত ভাইরাস জ্বরের যে লক্ষণ তার সবই ডেঙ্গুজ্বরে থাকে। ডেঙ্গু জ্বরের প্রাথমিক লক্ষণ হচ্ছে— সারা শরীরের মাংসপেশিতে বিশেষ করে হাড়, কোমর, পিঠসহ অস্থিসন্ধিতে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়। ব্যথা, জ্বর হওয়ার ৪ বা ৫ দিনের সময়ে এলার্জি বা ঘামাচির মতো সারা শরীর জুড়ে লালচে দানা দেখা যায়। এ জ্বর কম বা বেশি উভয়ই হতে পারে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে জ্বর ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হয়। খাবারে অরুচি ও বমি বমি ভাব হয়। সাধারণত জ্বর ৩-৪ দিন পর ভালো হয়ে যায়, তবে রক্তের প্লেটিলেট কমতে থাকে। কখনো মাঝে মাঝে বিরতি দিয়ে আবার জ্বর আসে এবং শরীরে র‍্যাশ দেখা যায়। কারো কারো ক্ষেত্রে প্রচণ্ড মাথা ব্যথার সঙ্গে শরীরেও প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হয় এবং জ্বর থাকে। কখনো চোখের পিছনে ব্যথা অনুভব করে। যাদের বেশি জ্বর থাকে তাদের শরীরের বিভিন্ন স্থান থেকে যেমন চামড়ার নিচ, নাক, মুখ, দাঁত ও মাড়ি, চোখের মধ্যে এবং চোখের বাহিরে, কফ, বমি ও পায়খানার সঙ্গে রক্তক্ষরণ হতে দেখা যায়। কারো কারো ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট হতে পারে আবার রোগীর রক্তনালী থেকে প্লাজমা লিকেজের কারণে বুকে ও পেটে পানি জমতে পারে। পানি শূন্যতা বেশি হওয়ায় প্রসাবের পরিমাণ কমে যেতে পারে, অনেক সময় লিভার আক্রান্ত হয়ে রোগীর জন্ডিস, কিডনিতে আক্রান্ত হয়ে রেনাল ফেইলিউর ইত্যাদি জটিলতা দেখা দিতে পারে।

ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার লক্ষণ প্রায় কাছাকাছি হলেও কিছু পার্থক্য আছে। চিকুনগুনিয়াতে র‍্যাশ সাধারণত ১-২ দিনেই দেখা যায়। এখানে মাংসপেশী বা পিঠ ব্যাথার তুলনায় অস্থিসন্ধি, হাতের আঙ্গুল এবং শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যাথা বেশি অনুভূত হয়। তবে চোখের পিছনে ব্যাথা, রক্তক্ষরণ, প্লাটিলেট কমে যাওয়া, শক এগুলো হয় না বললেই চলে। চিকুনগুনিয়া সাধারণত দ্বিতীয় বার হয় না তবে ডেঙ্গু দ্বিতীয় বার হলে জটিলতা আরো বেড়ে যায় বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। সাধারণত বর্ষাকালে শহর এলাকায় ডেঙ্গুজ্বরের প্রকোপ লক্ষ্য করা যায়।

খুবই সাধারণ কিছু নিয়মকানুন যা প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় সবসময় সকলের সচেতনতার জন্য সরকার কর্তৃক প্রচারিত হয় এগুলো মেনে চলে আমরা ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারি। আক্রান্ত রোগীকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়াসহ নতুনভাবে এ রোগের জীবাণুবাহী মশার আরো প্রসার না ঘটে সেজন্য সকলকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বাসার পাশে, ছাদে, পরিত্যক্ত জিনিসের ভেতর, ফুলের টব, এয়ার কন্ডিশনার, ফ্রিজ, বাথরুম ইত্যাদি জায়গায় যেন পানি না জমে থাকে সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। অন্তত ৩ দিনে ১ বার এসব জায়গা পরিষ্কার করতে হবে। সরকার এবং সিটি কর্পোরেশন এই করোনা মহামারীর মধ্যেই ডেঙ্গু প্রতিরোধে মশক নিধন অভিযান পরিচালনা করছেন। এছাড়া জলাশয়, নর্দমা, রাস্তার পাশের গর্ত এগুলো ও পরিষ্কার করার ব্যবস্থা নিচ্ছেন। তবে আমাদের সকলকেই নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হতে হবে। বাসাবাড়ি এবং উল্লেখিত স্থানসমূহ ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। এডিস মশা সকালে ও সন্ধ্যায় বেশি কামড়ায়, তাই এ সকল সময়ে বেশি সচেতনতা প্রয়োজন। সর্বোপরি ঢাকা শহরের সকল শিক্ষিত জনসাধারণ আমরা কমবেশি সবাই এ বিষয়ে অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে সচেতনতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলেই রাজধানীবাসী এ রোগ থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারবে।

করোনা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও বর্ষাকাল এবং এর পরবর্তী সময়ে ডেঙ্গুর বিষয়ে সতর্ক না থাকলে তা আমাদের জন্য বিশাল বিপদ ডেকে আনতে পারে। ব্যক্তি পর্যায়ে উদ্যোগ না থাকলে শুধু সরকারের চেষ্টায় ডেঙ্গু মোকাবেলা সম্ভব হবে না। তাই সচেতনতার কোন বিকল্প নেই।

লেখকঃ চিকিৎসক
পিআইডি ফিচার

 

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল সময়ের কথা ২৪ লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন somoyerkotha24news@gmail.com ঠিকানায়।