চারঘাট (রাজশাহী) প্রতিনিধি: রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার শতবর্ষী প্রতিষ্ঠান সরদহ সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের অর্ধবার্ষিক পরীক্ষার বিভিন্ন শ্রেণীর প্রশ্নপত্রে নানা ভুল ও অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। প্রশ্নপত্রে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নামের বানান ভুল ও মুজিবনগর সরকার নিয়ে একাধিক শ্রেণীর প্রশ্নপত্র তৈরি করা হয়েছে। এতে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ ও হতাশা।
পঞ্চম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষার সিলেবাসে শিক্ষার্থীদের রচনা পড়ানো হয়েছিল আমাদের দেশ, জাতীয় ফল, পরিবেশ দূষণ, শীতকাল, প্রিয় বই ও একুশে ফেব্রুয়ারি। কিন্তু পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র তৈরি করা হয়েছে বার্ষিক পরীক্ষার সিলেবাস থেকে। রচনা এসেছে ফুটবল, বিজয় দিবস ও ছাত্রজীবন। এতে পূর্বে এসব বিষয়ে প্রস্তুতি না থাকায় শিক্ষার্থীরা রচনা লিখতে পারেনি।
সষ্ঠ শ্রেণীর ইংরেজি প্রথম পত্রের সিলেবাসে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষায় ১-১৩ নং পাঠ পর্যন্ত অন্তর্ভুক্ত ছিল। প্রশ্নপত্রের উপরে লেখাও রয়েছে ১-১৩ নং পাঠ থেকে প্রশ্ন করা হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন করা হয়েছে ১৬ নং পাঠ ‘Boats sail on the rivers’ থেকে। ১৬ নং পাঠ না পড়া থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে কিছুই লিখতে পারেননি।
পঞ্চম শ্রেণীর গণিত প্রশ্নপত্রের ১৩ নং প্রশ্নে বলা হয়েছে- “একটি বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের উচ্চতা দেওয়া হলো।” নিচে কিছু উচ্চতার উদাহরণ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেখানে কোনো প্রশ্ন নেই। প্রশ্ন না থাকায় শিক্ষার্থীরা কি লিখবে তা নিয়ে দ্বিধায় পড়েছে।
একই শ্রেণীর বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় প্রশ্নপত্রের ২ এর গ নং প্রশ্নে বলা হয়েছে- “মেজর জিয়াইর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত হয়…… ফোর্স। সেখানে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের পরিবর্তে জিয়াইর রহমান লেখা হয়েছে। একই প্রশ্নপত্রের ১ এর ছ নং প্রশ্নে বলা হয়েছে- “মুজিবনগর সরকারে ছিলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম। তিনি দায়িত্ব পালন করতেন……।”
অষ্টম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় প্রশ্নপত্রের ৩ এর খ নং প্রশ্নে, ৯ এর ৮ নং প্রশ্নে মুজিবনগর সরকার থেকে প্রশ্ন করা হয়েছে। একই বিষয়ের বহুনির্বাচনি প্রশ্নের ১৪ নং এ মুজিবনগর সরকারের প্রশ্ন রয়েছে। নবম শ্রেণীর ইংরেজি প্রথম পত্রের প্রশ্নে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের কথা তুলে ধরা হয়েছে।
প্রশ্নপত্রে জিয়াউর রহমানের নামের বানান ভুল ও বিভিন্ন প্রশ্নপত্রে মুজিবনগর সরকারকে গুরুত্ব দিয়ে একাধিক প্রশ্ন থাকায় অভিভাবকরা ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ষ্ঠ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা সিলেবাস অনুযায়ী ইংরেজি বিষয়ের প্রস্তুতি নিয়েছি ১ থেকে ১৩ নং পাঠ পর্যন্ত, কিন্তু প্রশ্ন এসেছে ১৬ নং পাঠ থেকে। প্রতিটি শ্রেণীর প্রশ্নেই নানা রকম ভুলের কথা বলছেন অন্যরাও। এতে আমরা প্রশ্নের ঠিকমত উত্তর লিখতে পারিনি।
অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থীর এক অভিভাবক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, উপজেলার একমাত্র সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রশ্নে এত অধিকসংখ্যক ভুল আমাদের অবাক করেছে। মুজিবনগর সরকারকে গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্ন শ্রেণীর প্রশ্নপত্রে একাধিক প্রশ্ন রাখা হয়েছে। কিন্তু শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে নিয়ে একটি মাত্র প্রশ্ন রাখা হয়েছে সেখানেও জিয়াউর রহমানের নামের বানান ভুল। এটা পরিকল্পিত ভাবে করা হয়েছে বলে আমরা মনে করছি।
অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ফজলুর রহমান বলেন, এ ধরনের ভুল শিক্ষাক্ষেত্রে গুণগত মান নিশ্চিতকরণে বড় বাধা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, তবে ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের মৌলিক শিক্ষার দক্ষতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। যারা প্রশ্ন তৈরির কাজ করেন তাঁদের আরো যত্নবান হওয়া উচিত।
উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার রাহেদুল ইসলাম বলেন, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় হওয়ায় সেখানকার প্রশ্নপত্র তৈরিতে আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। সেখানকার শিক্ষকদের নিয়ে প্রশ্ন তৈরির কমিটি রয়েছে। তারা নিজেরা প্রশ্ন তৈরি করেন।
সরদহ সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) ইদ্রিশ আলী বলেন, আমার কাছে কোনো অভিভাবক অভিযোগ করেনি এজন্য জানা ছিল না। এখন বিষয়গুলো জানলাম। খুব দ্রুত সময়ে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ ও প্রশ্নপত্র সংশোধন করা হবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা রাজশাহী অঞ্চলের পরিচালক প্রফেসর মোহাঃ আছাদুজ্জামান বলেন, প্রশ্নপত্রে ভুলের বিষয়গুলো নিয়ে আপনারা লিখিত অভিযোগ দেন নয়তো পত্রিকা সংবাদ প্রকাশ করেন। এরপর আমার নজরে আসলে খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।