স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহীর মোহনপুরে ফ্রিজের কিস্তির বকেয়া টাকার জন্য এক ভ্যানচালকের জীবিকার একমাত্র মাধ্যম অটোভ্যান ছিনিয়ে নেওয়ার পর অপমান ও ক্ষোভে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। এই ভ্যানচালকের নাম হাসেম মন্ডল (৪০)। তিনি উপজেলার সইপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন।
গত বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) দুপুরে মোহনপুর উপজেলার কেশরহাটে আলিফ মীম এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ইলেকট্রনিকস শোরুমের মালিক তার ভ্যান কেড়ে নেন। এরপর তিনি ঘাষ মারা বিষ পান করেন। পরে শনিবার (১১ অক্টোবর) ভোরে তিনি মারা গেছেন। এ ঘটনার পর এলাকাজুড়ে তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় উঠেছে।
হাসেম মন্ডলের স্ত্রী সালমা বেগম জানান, তার স্বামী ওই শোরুম থেকে কিস্তিতে একটি ফ্রিজ কিনেছিলেন। তিনি নিয়মিত কিস্তি পরিশোধ করলেও শোরুমের মালিক আকরাম আলী ও তার সহযোগীরা বকেয়া ১০ হাজার টাকা এবং সুদবাবদ আরও ১০ হাজার টাকার জন্য দীর্ঘদিন ধরে তাকে ভয়ভীতি ও চাপ সৃষ্টি করে আসছিলেন।
বৃহস্পতিবার সকালে হাসেম যাত্রী নিয়ে কেশরহাট বাজারে গেলে শোরুম মালিক আকরাম আলী, তার ছোট ভাই আকতার হোসেন ও কয়েকজন কর্মচারী মিলে তার অটোভ্যানটি জোর করে কেড়ে নেন এবং তাকে মারধর করেন। জীবিকার একমাত্র মাধ্যম ফেরত দিতে হাসেম আকুতি জানালেও তারা সেটি দেননি।
অপমান সহ্য করতে না পেরে হাসেম স্থানীয় বাজার থেকে ‘প্যাডি’ নামের ঘাসনাশক বিষ কিনে শোরুমের ভেতরেই পান করেন। পরে শোরুমের কর্মচারীরা তাকে বাইরে ফেলে রেখে চলে যায়। স্থানীয়রা দ্রুত তাকে উদ্ধার করে মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেন। চিকিৎসক ভর্তি না নিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। দুই দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর শনিবার (১১ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৬টার দিকে হাসেম মন্ডল মারা যান।
এ ঘটনার পর থেকেই শোরুম মালিক আকরাম আলী ও তার ভাই আকতার হোসেন কেশরহাটের দুটি শোরুম বন্ধ করে পলাতক রয়েছেন। মামলা এড়াতে তারা তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে তিন লাখ টাকায় বিষয়টি ‘দফারফা’ করার চেষ্টা করছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, আলিফ মীম এন্টারপ্রাইজ নিয়মিতভাবে কিস্তিতে পণ্য বিক্রি করে পরে গ্রাহকদের কাছ থেকে সুদসহ বকেয়া টাকা আদায়ের নামে ভয়ভীতি ও শারীরিক নির্যাতন চালাত। কেউ সময়মতো কিস্তি দিতে না পারলে জোরপূর্বক পণ্য ফেরত নিয়ে তা পুনরায় অন্য গ্রাহকের কাছে বিক্রি করা হতো।
মোহনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান বলেন, ফ্রিজের কিস্তির টাকার জন্য অটোভ্যান কেড়ে নেওয়ায় ভ্যানচালক হাসেম বিষপান করেন। এ ঘটনায় জিডি করা হয়েছে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’