নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

বাংলাদেশ বৃহস্পতিবার। রাত ১১:৩৮। ৩০ অক্টোবর, ২০২৫।

রাবি সুইমিংপুলে ডুবে যাওয়ার ২০ মিনিট পর উদ্ধার করা হয় সায়মাকে

অক্টোবর ৩০, ২০২৫ ৮:১৮
Link Copied!

রাবি প্রতিনিধি : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মোছা. সায়মা হোসেনের মৃত্যুর প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) বিকেল ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে এ রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়।

লিখিত তদন্ত রিপোর্ট সবার সামনে উপস্থাপন করেন তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দীন খান। তিনি জানান, সায়মার মৃত্যুর পরদিন থেকেই ২১ জন ব্যক্তির সাক্ষাৎকার, মেডিকেল ও সুইমিংপুলের সিসিটিভি ফুটেজ, লিখিত বক্তব্যসহ বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে এ প্রাথমিক রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে।

তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়, সেদিন সায়মা সাইকেল নিয়ে সুইমিংপুলে আসে। সাইকেল রেখে পোশাক পরিবর্তন করে পানিতে নামে। তার সঙ্গে আরও একজন শিক্ষার্থীও সাঁতারে অংশ নেয়। দুজন একসঙ্গে সাঁতার শুরু করলেও তার সহপাঠী কিছুটা দ্রুত ছিল এবং এগিয়ে যায়।

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, বিকেল ৪টা ১২ মিনিট ৩০ সেকেন্ডে সায়মা প্রথম লেনে দেয়ালের পাশে সাঁতার কাটছিল। তার পাশেই আরেকজন মেয়ে ছিল। প্রায় এক মিনিট স্বাভাবিকভাবে সাঁতার কাটার পর সায়মা সমস্যায় পড়ে। ফুটেজে দেখা যায়, সে বারবার পানির নিচে ডুব দিচ্ছিল ও উঠছিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই সে সম্পূর্ণ তলিয়ে যায়। কিন্তু আশেপাশের কেউ বিষয়টি খেয়াল করেনি।

সেদিন সেখানে আরও পাঁচজন সাঁতারু ও তিনজন প্রশিক্ষক ছিলেন। তাদের কারোরই চোখে পড়েনি সায়মার ডোবা। পরে পাশের মেয়েটি সাঁতার শেষে লক্ষ্য করে সায়মা নেই। সে বিষয়টি প্রশিক্ষকের কাছে জানায়। এরপর ওয়াশরুমসহ আশেপাশে খোঁজ করেও না পেয়ে একজন শিক্ষার্থী পানির নিচে সায়মাকে দেখতে পায়।

রুনা লায়লা নামে এক প্রশিক্ষক পানিতে নেমে সায়মাকে তুলতে চেষ্টা করেন, কিন্তু পারেননি। পরে আরও ২-৩ জন নামলেও সফল হননি। পানির গভীরতা প্রায় সাত ফুট হওয়ায় তোলা কঠিন হচ্ছিল। এরপর বাইরে থেকে কয়েকজন শিক্ষার্থী এসে সাহায্য করে। তাদের মধ্যে একজন সায়মার মাথা উপরে তুলে আনেন, তারপর সবাই মিলে তাকে পানির বাইরে তোলে।

উদ্ধারের পর সায়মাকে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া হয়। সেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক জানান, তার পালস ও রক্তচাপ ছিল না। তবে দক্ষ কর্মীর অভাবে অক্সিজেন দিতে প্রায় ১০ মিনিট বিলম্ব হয়। পরে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

অধ্যাপক ফরিদ উদ্দীন বলেন, সায়মার পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, তার আগে থেকেই শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা ছিল এবং সে ইনহেলার ব্যবহার করত। তারপরও কেন তাকে সাঁতারে অংশ নিতে দেওয়া হলো, সেটা বড় প্রশ্ন। আর একজন শিক্ষার্থী ডুবে যাওয়ার ২০ মিনিট পরেও কেন কেউ খেয়াল করেনি, সেটিও অত্যন্ত উদ্বেগজনক।

তিনি আরও বলেন, তবে আমরা উপস্থিত সাঁতারু বা মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসকদের অবহেলা বা গাফিলতির কোনো প্রমাণ পাইনি। তারা সায়মাকে বাঁচাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। দৌড়াদৌড়ি ও দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু মেডিকেল সেন্টারে দক্ষ নার্স বা কর্মী না থাকায় বিলম্ব ঘটে। আর যে গুজব ছড়িয়েছে যে প্রশিক্ষক সাঁতার জানেন না, সেটা সত্য নয়- তিনি সাঁতার পারেন। এখন পর্যন্ত এসব তথ্য পাওয়া গেছে, বাকি বিষয়গুলো চূড়ান্ত তদন্ত রিপোর্টে জানানো হবে।

সিনেট ভবনে রিপোর্ট প্রকাশের সময় উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মাঈন উদ্দীন, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতেখার আলম মাসউদ, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ড. মো. সিদ্দিকুর রহমানসহ বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন নবনির্বাচিত রাকসু প্রতিনিধিরা।

এর আগে, তদন্ত রিপোর্ট ৭২ ঘণ্টা পার হলেও প্রকাশ না হওয়ায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিক্ষোভ করেন। এ সময় তারা টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবাদ জানায়।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল সময়ের কথা ২৪ লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন somoyerkotha24news@gmail.com ঠিকানায়।