রাবি প্রতিনিধি : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আ-আল মামুনের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অবমাননাকর ও বিদ্বেষমূলক মন্তব্যের অভিযোগ এনে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু)।
মঙ্গলবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতি বরাবর দেওয়া এক স্মারকলিপিতে রাকসুর নবনির্বাচিত নেতারা এ দাবি জানান।
স্মারকলিপিতে অভিযোগ করা হয়েছে, অধ্যাপক আ-আল মামুন সম্প্রতি নিজের ফেসবুক পোস্টে রাকসু নির্বাচনে হল সংসদে বিজয়ী নারী প্রতিনিধিদের ব্যক্তিগত পোশাক, ধর্মীয় বিশ্বাস ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতা নিয়ে অবমাননাকর ও বিদ্বেষপ্রবণ মন্তব্য করেছেন। এছাড়া পূর্বের বেশ কয়েকটি পোস্টেও তিনি ‘বোরকা’, ‘কাঠমোল্লা’, ‘মদ’, ‘সেক্সুয়াল রেভল্যুশন’ ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন।
এতে আরও বলা হয়েছে, এক পোস্টে তিনি টু-কোয়াটার প্যান ও হাতে মদের বোতল নিয়ে ক্লাসে আসার ঘোষণা দেন এবং এক ছাত্রসংগঠন ও সাংবাদিকদের সেখানে আমন্ত্রণ জানান। শিক্ষাঙ্গনের নৈতিকতা ও পেশাগত দায়িত্ববোধের পরিপন্থী এমন বক্তব্যকে রাকসুর নেতারা ‘গুরুতর অনৈতিক’ বলে অভিহিত করেছেন।
স্মারকলিপিতে তাঁরা পাঁচটি দাবি উত্থাপন করেন—
১. অধ্যাপক আ-আল মামুনকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।
২. ঘটনাটির পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
৩. প্রশাসনকে বিদ্বেষমূলক ও উসকানিমূলক মন্তব্যের বিরুদ্ধে স্পষ্ট ও দৃঢ় অবস্থান নিতে হবে।
৪. ভবিষ্যতে কোনো শিক্ষক বা কর্মকর্তা শিক্ষার্থীর ধর্মীয় বিশ্বাস বা পোশাক নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করলে তার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
৫. শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে সহিষ্ণুতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ জোরদারে সেমিনার বা ওরিয়েন্টেশন আয়োজন করতে হবে।
জানা গেছে, গতকাল সোমবার অধ্যাপক আ-আল মামুন তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে রাকসুর হল সংসদের নির্বাচিত নারী প্রতিনিধিদের বোরকা পরা দুটি ছবি সংযুক্ত করে একটি স্ট্যাটাস দেন। পোস্টে তিনি লেখেন,
“এই ব্যক্তিগত স্বাধীনতা আমি এন্ডর্স করছি। কাল আমি এ রকম ব্যক্তিগত স্বাধীনতা পরে ও হাতে নিয়ে ক্লাসে যাব। পরব টু-কোয়াটার, হাতে থাকবে মদের বোতল। মদ তো ড্রাগ না! মদ পান করার লাইসেন্সও আমার আছে! শিবির আইসেন, সাংবাদিকেরাও আইসেন!”
পোস্টটি দেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি তা ডিলিট করে ফেলেন। তবে এর স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনা ও বিতর্কের সৃষ্টি হয়। রাতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা ওই মন্তব্যের প্রতিবাদে বিক্ষোভও করেন।
পরবর্তীতে অধ্যাপক আ-আল মামুন আরেকটি পোস্টে ব্যাখ্যা দিয়ে লেখেন, “এই পোস্টে কি কিছু রিয়েকশন আছে? নাই। এই পোস্ট কতক্ষণ ছিল? ৩ সেকেন্ড হয়তো। হিজাবের বিরুদ্ধে কথা ছিল? না। পোশাকের স্বাধীনতার কথা ছিল! আমি একজন একাডেমিশিয়ান, আমি বিচিত্র উপায়ে নোট নেই ও ভাবি… কিন্তু উন্মত্ত শাবকরা জাল পেতে বসে থাকে আপনাকে বিপদে ফেলার জন্য!”
আজ সকালে আরেকটি পোস্টে তিনি লিখেছেন, “আমি উপহাস বা তাচ্ছিল্য করিনি। তারপরও কেউ আঘাত পেয়ে থাকলে আমি দুঃখিত।”

