নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

বাংলাদেশ রবিবার। ভোর ৫:১৯। ২৬ অক্টোবর, ২০২৫।

রাজশাহীতে বায়ু দূষণ এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি

অক্টোবর ২৫, ২০২৫ ২:৪৮
Link Copied!

স্টাফ রিপোর্টার : বরেন্দ্র পরিবেশ উন্নয়ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষ থেকে, বারিন্দ এনভায়রনমেন্ট এর সহযোগিতায় পরিবেশ বান্ধব শহর রাজশাহীর বিভিন্ন স্থানে বায়ুতে বিদ্যমান ভাসমান বস্তকনা, পি.এম ২.৫ এবং পি.এম ১০, অদ্য ২৫ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে নির্ণয় করা হয়, এবং একই সাথে উক্ত স্থান গুলোতে বায়ু দূষণ রোধে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হয়। উল্লেখ্য যে, ২০২২, ২০২৩ ও ২০২৪ সালে শুস্ক মৌসুমে একযোগে পাঁচটি স্থানে এ গবেষণা পরিচালনা করা হয়েছিল, এরই ধারাবাহিকতায় বায়ুর বর্তমান অবস্থা জানার জন্য গবেষণাটি পুনরায় পরিচালনা করা হয়। পূর্বের ন্যায় একই স্থান, তথা জনবহুল স্থান হিসেবে রেইলগেট ও বন্ধগেট এলাকা হতে, এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল এলাকা হিসেবে বিসিক মঠ পুকুর এর নিকটে দিনব্যাপী গবেষণাটি পরিচালিত হয়।

উক্ত পরীক্ষায় নেতৃত্ব দেয় প্রকৌশলী মোঃ জাকির হোসেন খান (পি.এইচ.ডি.)। উনাকে সহযোগিতা করেন অলি আহমেদ (পি.এইচ.ডি.), ওবায়দুল্লাহ, শামশুর রহমান শরীফ, ইফাত আরা, কলি আহমেদ, রুমানা আহমেদ, আবু বক্কর সিদ্দিক প্রমুখ। বায়ু পরীক্ষার মূল উদ্দেশ্য ছিল শীতের প্রাক্কালে রাজশাহীর বায়ুতে বিদ্যমান বস্তুকনা, পি.এম ২.৫ এবং পি.এম ১০ নির্ণয় করা পর্যবেক্ষণ। বাংলাদেশের বায়ুর নির্ধারিত ঘনমাত্রা পি.এম ২.৫ এর জন্য ৬৫ মাইক্রোগ্রাম/ঘনমিটার এবং পি.এম ১০ এর জন্য ১৫০ মাইক্রোগ্রাম/ঘনমিটার; ২৪ ঘন্টার জন্য। পরীক্ষায় সর্বোচ্চ পি.এম ২.৫ এবং পি.এম ১০ মাত্রা পাওয়া যায় রেলগেট মোড়ে যথাক্রমে ৮৫ এবং ৯৭ মাইক্রোগ্রাম/ঘনমিটার।

নগরীর বন্ধগেট এলাকায় পি.এম ২.৫ এবং পি.এম ১০ মাত্রা পাওয়া যায় যথাক্রমে ৭৮ এবং ৯১ মাইক্রোগ্রাম/ঘনমিটার, এবং বিসিক এলাকায় যথাক্রমে ৫৭ এবং ৬৯ মাইক্রোগ্রাম/ঘনমিটার। নগরীর রেলগেট এলাকা এবং বন্ধগেট এলাকায় প্রাপ্ত সর্বোচ্চ পি.এম ২.৫ এর পরিমান বাংলাদেশের নির্ধারিত ঘনমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি।

উল্লেখ যে, নগরীতে ২০২২ এ সর্বোচ্চ গড় পি.এম ২.৫ পাওয়া গিয়েছিল ৭৬, ২০২৩ এ ৯৭ এবং ২০২৪ সালে ১২৫। বর্তমানে পর্যবেক্ষণেও বায়ু পরীক্ষায় অত্যান্ত বিপদজনক মাত্রায় পি.এম ২.৫ পাওয়া যায়। পি.এম ২.৫ কে বলা ফাইন পার্টিকলেস। এটা lung এর গভীরে যেতে পারে, এমন কি রক্তের প্রবাহেও যেতে পারে। এর মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি lung এবং হার্ট এর ক্ষতি করে। পি.এম ১০ কে বলা হয় কোর্স পার্টিকলেস; এটার জন্য চোখ, নাক ও গলায় অস্বস্থিবোধ হয়। নির্ধারিত পরিমানের চেয়ে অধিক পরিমান পি.এম ২.৫ এবং পি.এম ১০ মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যান্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

বিগত পর্যালোচনা থেকে দেখা যায়, মূলত অপরিকল্পিত নগরায়ন, গাছ কেটে ও পুকুর ভরাট করে অবকাঠামো নির্মাণ এবং অবকাঠামো নির্মাণের সময় বাংলাদেশের বায়ু দূষণ বিধি ২০২২ না মানা এই বায়ু দূষণের মূল কারণ। বায়ু দূষণ শুধু মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর না, এটা জীব বৈচিত্রের জন্যেও হুমকি স্বরূপ। শহরে পর্যাপ্ত এবং পরিকল্পিত গাছ লাগানো উচিত। আমের শহর রাজশাহীতে আম-জাম জাতীয় ফলের গাছ, নিম, সজনে জাতীয় উপকারী গাছ লাগানো যেতে পারে; যেগুলো বড় হলে বায়ু দূষণ রোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে। সজনে গাছ বায়ু থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে অক্সিজেন নির্গমনে কার্যকর গাছ গুলোর মধ্যে অন্যতম। একই সাথে অবকাঠামো নির্মাণে বায়ু দূষণ বিধি ২০২২ মেনে চলতে হবে।

নগরীর পুকুর ভরাট বন্ধ করতে হবে, একই সাথে অবৈধ দখল হয়ে যাওয়া পুকুরগুলো উদ্ধার করে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। একটা গাছ কাটলে তার বদলে অন্তত তিনটা গাছ লাগানোর নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে। উল্লেখ্য যে, ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাংক ও পরিবেশ অধিদপ্তরের গবেষণায় ঢাকা ও রাজশাহীর বায়ূ ধূষণের ৬০-৭০% উৎস হিসেবে দায়ী করা হয় অপরিকল্পিত নগরায়ন, পরিবেশ নিয়ম না মেনে নির্মাণ কাজ, সড়কের ধূলো এবং পুরোনো যানবাহন।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল সময়ের কথা ২৪ লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন somoyerkotha24news@gmail.com ঠিকানায়।