নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

বাংলাদেশ রবিবার। রাত ১:০৭। ১৯ অক্টোবর, ২০২৫।

সরকারি ব্যাংকের উচ্চ খেলাপি ঋণে উদ্বেগ

জুলাই ২০, ২০২২ ৫:৫৭
Link Copied!

ব্যাংক খাতে সংস্কারের অগ্রগতি জানতে চেয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। একই সঙ্গে সরকারি ব্যাংকে উচ্চ খেলাপি ঋণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।

তবে করোনায় প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রশংসা করেছে আইএমএফ। এছাড়া ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাব এবং চ্যালেঞ্জ, এর থেকে উত্তরণের কী কী পরিকল্পনা করেছে তাও জানতে চেয়েছে সংস্থাটি।

মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে সফররত আইএমএফ প্রতিনিধি দলের রুদ্ধদ্বার এক বৈঠকে এসব বিষয় উঠে আসে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। আইএমএফ স্টাফ ভিজিট মিশন-২০২২ নামে প্রতিনিধি দলটি বৃহস্পতিবার ঢাকা সফরে এসেছে। এর নেতৃত্বে রয়েছেন রাহুল আনন্দ।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, ইউক্রেন যুদ্ধে বৈশ্বিক প্রভাব নিয়ে কথা বলেছে আইএমএফ। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হার উন্নয়নে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি। তা না হলে ঝুঁকির সৃষ্টি হতে পারে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ব্যাংক খাতে সংস্কারের অগ্রগতি কতটুকু হয়েছে তা জানতে চেয়েছে আইএমএফ। বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের উচ্চ খেলাপি ঋণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। খেলাপি ঋণ কমাতে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তাও জানতে চেয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হলো রাকসু নির্বাচন, ফলাফলের অপেক্ষা

এর আগে ১৭ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামালের সঙ্গে সফররত আইএমএফ প্রতিনিধি দলের বৈঠক হয়। সে বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের হিসাব পদ্ধতি নিয়ে ফের আপত্তি তোলে আইএমএফ। সংস্থাটি বলেছে, রিজার্ভের অর্থে গঠিত রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলসহ (ইডিএফ) বিভিন্ন ঋণ তহবিল গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক, যা এখনো রিজার্ভেই দেখানো হচ্ছে। অথচ এগুলো নন লিকুইড সম্পদ বা ইনভেস্টমেন্ট গ্রেড সিকিউরিটিজ। সংস্থাটির ব্যালেন্স অব পেমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন (বিপিএম-৬) ম্যানুয়াল অনুযায়ী, এসব দায় রিজার্ভ হিসাবে বিবেচিত হবে না। বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, দুটি পদ্ধতিতে রিজার্ভ হিসাব করে থাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একটি হলো গ্রস হিসাব। আরেকটি নিট হিসাব। নিট হিসাবে রিজার্ভ থেকে বিভিন্ন ঋণ তহবিল বাদ দেওয়া হয়। তবে আগামীতে আইএমএফের ম্যানুয়াল মেনেই রিজার্ভের হিসাব দেখানো হবে বলে একমত হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এ বিষয়ে বৈঠকে উপস্থিত বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, রিজার্ভ হিসাবায়নে আইএমএফ যে পদ্ধতির কথা বলেছে সেটিতে আগেই সম্মতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন এ বিষয়ে কাজ চলছে বলে বৈঠকে আইএমএফকে জানানো হয়েছে। আগামী ২ মাসের মধ্যে আইএমএফের ম্যানুয়াল অনুযায়ী রিজার্ভের হিসাবায়ন দেখানো সম্ভব হবে। জানা যায়, বর্তমানে রিজার্ভের অর্থে ইডিএফে ৭০০ কোটি, জিটিএফে ২০ কোটি, এলটিএফএফে ৩ কোটি ৮৫ লাখ এবং সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষকে ৬৪ কোটি ডলার ও বাংলাদেশ বিমানকে ৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার ঋণ দেওয়া হয়েছে। এই ৭৯২ কোটি ৬৫ লাখ ডলারের বাইরে কারেন্সি সোয়াপের আওতায় শ্রীলংকাকে দেওয়া হয়েছে ২০ কোটি ডলার। এটা রিজার্ভ থেকে বাদ দিলে প্রকৃত রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসবে।

আরও পড়ুনঃ  রাজশাহীতে যুবদল নেতা নাজির হাসানের নেতৃত্বে তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফা লিফলেট বিতরণ

২০২০ সালের ১ এপ্রিল থেকে ক্রেডিট কার্ড ছাড়া সব ধরনের ঋণের সুদ হার ৯ শতাংশ বেঁধে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। মূলত বেসরকারি বিনিয়োগ আকর্ষণ ও ব্যবসায় খরচ কমিয়ে আনতে সুদহারের সীমা বেঁধে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর থেকেই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সুদহারের সীমা তুলে দেওয়ার সুপারিশ করে আসছে। বৈঠকে একই সুপারিশ করে আইএমএফ বলেছে, ঋণের সুদের সীমা না তুলে পলিসি রেট বাড়ানোর যৌক্তিকতা কোথায়। এর উত্তরে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ হিসাবে পলিসি রেট বাড়ানো হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  রাজশাহী বোর্ডে ৩৫ কলেজে পাশ করেনি কেউ

বাংলাদেশে ডলার ও টাকার বিনিময় হার স্বাধীনতার পর থেকে সরকার নির্ধারণ করে দিত। টাকাকে রূপান্তরযোগ্য ঘোষণা করা হয় ১৯৯৪ সালের ২৪ মার্চ। আইএমএফের চাপে ২০০৩ সালের মে মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হারকে ভাসমান করে বা বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়। তবে বিনিময় হার ভাসমান হলেও পুরোপুরি তা বাজারভিত্তিক থাকেনি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সব সময়ই এতে পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণ রেখে আসছে। অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংক এ ব্যাপারে অনুসরণ করে আসছে ‘ম্যানেজড ফ্লোটিং রেট’ নীতি। এ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আইএমএফ বারবারই আপত্তি করে আসছে। মঙ্গলবারও জোরালোভাবেই বিষয়টি তুলে ধরেছে আইএমএফ। তবে টাকার অবমূল্যায়নকে স্বাগত জানিয়েছে সংস্থাটি। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় সময়ে সময়ে বিনিময় হার কিছুটা নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়ে থাকে। বৈঠকে চলতি অর্থবছরে প্রক্ষেপিত হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। এছাড়া বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ঘাটতি রোধে করণীয় নিয়েও আলোচনা হয়।

    পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল সময়ের কথা ২৪ লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন somoyerkotha24news@gmail.com ঠিকানায়।