নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

বাংলাদেশ সোমবার। দুপুর ১:২৭। ১০ নভেম্বর, ২০২৫।

খেলনা বিক্রি করে চলে সংসার

আগস্ট ৬, ২০২৩ ১০:৩৬
Link Copied!

স্টাফ রিপোর্টার: সংসারের হাল ধরতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের আশপাশে খেলনার পসরা সাজিয়ে বসেছেন সাবিনা। এ ছোট্ট দোকানের আয় দিয়ে চলে তার সংসার ও ছেলেমেয়ের পড়াশোনার খরচ। স্বামী রিকশা চালালেও রাখেন না সাবিনার কোনো খোঁজ। এমনকি দেন না সন্তানদের ভরণপোষণের খরচও। আর তাই একাই লড়াই করে চলছেন সাবিনা।

রাজশাহীর মৌলভীবুধপাড়ার বাসিন্দা সাবিনার স্বপ্ন ছিল ছেলেমেয়েকে পড়াশোনা করিয়ে মানুষের মতো মানুষ করার। কিন্তু নিয়তি তার সহায় হয়নি। বাধ্য হয়েই ক্যাম্পাসে বসিয়েছেন খেলনার দোকান। আগে শুধু বাদাম বিক্রি করতেন তিনি। ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা তার এই অসহায়ত্ব দেখে ওজন মাপার যন্ত্রসহ কিনে দেন দোকানের বেশ কিছু মালামাল।

সরেজমিনে দেখা যায়, সাবিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনারের দক্ষিণ-পশ্চিম কোনে রাস্তার পাশে সাজিয়ে রেখেছেন বিভিন্ন ধরনের খেলনা। এছাড়াও সামনে সাজানো রয়েছে বাদাম, ছোলাসহ কয়েকপ্রকার খাবারের কৌটা। সামনে রাখা আছে ওজন মাপার যন্ত্র। ওজন মাপার জন্য তিনি নির্ধারিত কোনো টাকা নেন না। যে যা দেয় তাতেই হয়ে যায় তার।

তার এমন সংগ্রামী জীবন নিয়ে কথা হয়। মলিন কণ্ঠে সাবিনা বলেন, আমার এক মেয়ে ও এক ছেলে আছে। মেয়েটা পঞ্চম শ্রেণিতে আর ছেলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। স্বামী থেকেও না থাকার মতো। আমাকে কোনো খরচ দেন না। আমরা যে দুই বেলা খাবো এমন খরচটাও পাই না। আমার সন্তানদের পড়াশোনার খরচ চালাতে পারছিলাম না। বাধ্য হয়ে গত ছয়-সাত মাস হলো এভাবে দোকান দিয়ে বসেছি।

তিনি আরও বলেন, বাড়িতে টিউবওয়েল নাই। অনেকে আশ্বাস দিলেও কেউ সাহায্য করেনি। ওজন মাপার যন্ত্র কিনে দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মামারা। আর খেলনাগুলো পাঁচ হাজার টাকা ধার করে তুলেছি।

কেমন চলছে তার দোকান জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি যে কয়দিন এসেছি আল্লাহ রহমতে একটা/দুইটা বিক্রি হয়েছে। এভাবেই কোনো রকমে দিন চলে যাচ্ছে সন্তানদের নিয়ে। আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি আমার সন্তানদের মানুষের মতো মানুষ করতে। আল্লাহর কাছে আশা রেখেছি যতদিন সুস্থ থাকবো আমি যেন এভাবে সৎ পথেই কাজ করে খেতে পারি। প্রতিদিন যা বেচাকেনা হয় তা দিয়ে এক কেজি চাল বা ডাল কিনে নিয়ে যাই তখন নিজেরও ভালো লাগে।

তিনি আরও বলেন, আমার একটি টিনের ঘর রয়েছে। যতক্ষণ বৃষ্টি হয় টিনের চাল দিয়ে পানি পরে। টিন ভালো না আমার ঘরের। ফুটা হয়ে গেছে। বৃষ্টি শুরু হলে গামলা, ডিস পেতে বসে থাকতে হয়।

সাবিনার বিষয় সত্যতা যাচাই করতে কথা হয় ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী পারভেজ আহমেদ জয়ের সাথে। তিনি বলেন, এই মহিলাকে প্রথমে দেখতাম বাদাম আর বিস্কিট নিয়ে বসতে। এটা চোখে পড়লে আমি আর আমার ভাই রেজোয়ান ইসলাম মিলে সহায়তা করার চিন্তা করি এবং তার সঙ্গে কথা বলি যে আপনার জন্য কি করলে খুশি হবেন? তিনি উত্তরে বললেন, তার দোকানটা বড় করে দিতে। সত্যতা যাচাই করার উদ্দেশ্যে আমি আর ভাই বুথপাড়া গ্রামে যাই যেখানে তাদের বাড়ি। তারপর আশপাশে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি তার অসহায়ত্বের কথা। আমরাও সব দেখে আসলাম। তার আর্থিক অবস্থা একদমই খারাপ।

এ বিষয়ে কথা হয় রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ৩০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শহিদুল ইসলাম পিন্টু বলেন, আমার ওয়ার্ডে আমি সবসময় চেষ্টা করি গরিব মানুষের জন্য কিছু করতে। নলকূপের বিষয়গুলো এখন সরাসরি সিটি করপোরেশন দেখে। তাই আমরা সরাসরি কিছু করতে পারি না। অসচ্ছল কেউ থেকে থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে আমরা অবশ্যই সাহায্য করবো তাকে।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল সময়ের কথা ২৪ লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন somoyerkotha24news@gmail.com ঠিকানায়।