নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

বাংলাদেশ রবিবার। সকাল ৭:৩৭। ১৯ অক্টোবর, ২০২৫।

তেভাগা আন্দোলনের নেত্রী ইলা মিত্রের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন

অক্টোবর ১৮, ২০২৫ ৯:৩৯
Link Copied!

স্টাফ রিপোর্টার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ : ঐতিহাসিক তেভাগা আন্দোলনের কিংবদন্তি ও নাচোলের ‘রাণীমা’ খ্যাত ইলা মিত্রের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করা হয়েছে। শনিবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে ইলা মিত্র জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে জেলা শহরের ফায়ার সার্ভিস মোড় থেকে একটি শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে পৌর পার্কে এসে আদিবাসী ও বাঙালি কৃষক সমাবেশে মিলিত হয়।

শোভাযাত্রা ও সমাবেশে অংশ নেন বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধি, শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং আদিবাসী নারী-পুরুষ।

সমাবেশে বক্তব্য দেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের অধ্যাপক উদয় শংকর বিশ্বাস, ছাত্র উপদেষ্টা আমিরুল ইসলাম কনক, আহ্বায়ক বঙ্গপাল সরদার, আদিবাসী লেখক ও গবেষক পিথুশিলাক মুরমু, উত্তরবঙ্গ আদিবাসী ফোরামের সভাপতি হিংগু মুরমু এবং জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিচিত্রা তির্কি।

আরও পড়ুনঃ  ওয়ানডে ‘ক্রাইসিস’ কাটাতে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ

বক্তারা বলেন, রাণী ইলা মিত্র ছিলেন কৃষক অধিকার ও নারীর মর্যাদার প্রতীক। ১৯৪৬ থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে তেভাগা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। কৃষক আন্দোলনের সময় তিনি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে নির্মম নির্যাতনের শিকার হন। তাঁর সংগ্রামী জীবন নতুন প্রজন্মকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অনুপ্রেরণা জোগাবে।

অন্যদিকে, নাচোলের ইলা মিত্র স্মৃতি সংগ্রহশালা প্রাঙ্গণে কেক কাটা ও মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে চার দিনব্যাপী ‘ইলা মিত্র মেলা’র উদ্বোধন করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ইলা মিত্র স্মৃতি সংসদের সভাপতি বিধান শিং, চলচ্চিত্র ‘রাণী ইলা মিত্র’-এর পরিচালক সৈয়দ অহিদুজ্জামান ডায়মন্ড, গবেষক ও লেখক আলাউদ্দিন আহমেদ বটু, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ ক্বাফি এবং জেলা সভাপতি ইসরাইল সেন্টুসহ অনেকে।

আরও পড়ুনঃ  ব্যর্থ হয়ে দেশে ফিরে বিমানবন্দরে দর্শকদের দুয়ো শুনলেন মিরাজরা

এর আগে আদিবাসী সম্প্রদায়ের বিভিন্ন গোষ্ঠীর নৃত্য, ঐতিহ্যবাহী গোম্ভীরা ও নাটিকা পরিবেশিত হয়।

প্রসঙ্গত ইলা মিত্রের জন্ম ১৯২৫ সালের ১৮ অক্টোবর কলকাতায়। জন্মের সময় তাঁর নাম রাখা হয় ইলা সেন। রমেন মিত্রের সঙ্গে বিয়ের পর স্বামীর পদবি নিয়ে তিনি ইলা মিত্র নামে পরিচিতি লাভ করেন।

নারী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে তিনি ১৯৪৩ সালে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। ১৯৪৫ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামের রমেন মিত্রের বধূ হয়ে ইলা মিত্র বাংলাদেশে আসেন। পরে তিনি এবং তাঁর স্বামী দুজন মিলে তখনকার পূর্ব পাকিস্তানের রাজশাহী জেলার নবাবগঞ্জ জেলার নাচোলে অনুষ্ঠিত তেভাগা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন।

১৯৫০ সালের ৫ জানুয়ারি কৃষক বিদ্রোহ সংগঠিত হয়। পুলিশ ও সেনারা এই বিদ্রোহ দমন করে। ১৯৫০ সালের ৭ জানুয়ারি সাঁওতাল বেশ ধারণ করে ভারতে যাওয়ার সময় রহনপুর রেলস্টেশনে ইলা মিত্রকে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তান পুলিশ। কারাগারে তার ওপর চলে পাশবিক নির্যাতন। এরপরও আদালতে নির্ভীক চিত্তে ঐতিহাসিক জবানবন্দি দেন কিংবদন্তি এই নেত্রী। কৃষকদের সঙ্গে সংঘর্ষে ৪ জন পুলিশ নিহত হওয়ায় ইলা মিত্রসহ ২৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেওয়া হয়। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকার ইলা মিত্রকে প্যারোলে মুক্তি দিয়ে কলকাতা যাবার অনুমতি দেয়। এরপর আর পূর্ব বাংলায় ফিরে আসতে পারেননি ইলা মিত্র।

আরও পড়ুনঃ  বাংলাদেশের আশা সংকীর্ণ করে যত রেকর্ড অস্ট্রেলিয়ার

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের পক্ষে তিনি ভারতে ও বিশ্ব পরিসরে জনমত সংগঠিত করতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ২০০২ সালের ১৩অক্টোবর ৭৭ বছর বয়সে ভারতের পশ্চিবঙ্গে ইলা মিত্রের দেহাবসান ঘটে।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল সময়ের কথা ২৪ লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন somoyerkotha24news@gmail.com ঠিকানায়।