নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

ঢাকা বুধবার। সকাল ১১:০০। ১৪ মে, ২০২৫।

প্রিমিয়ার লিগের ডিফেন্ডাররা কেন রক্ষণ সামলাতে ভুলে গেছেন

মে ৭, ২০২৩ ৯:৪১ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

প্রিমিয়ার লিগে গত রোববারের লিভারপুল বনাম টটেনহামের ম্যাচটিতে ফিরে যাওয়া যাক। ৩–০ গোলে লিভারপুলের এগিয়ে থাকা ম্যাচে টটেনহাম প্রথম গোলটি শোধ করে ম্যাচের ৪০ মিনিটে। ইভান পেরিসিচের অ্যাসিস্টে গোলটি করেন হ্যারি কেইন। সেই গোলে বাঁ প্রান্তে ডি–বক্সের কাছাকাছি জায়গায় পেরিসিচের কাছে রীতিমতো নাস্তানাবুদ হন বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা সেন্টারব্যাকদের একজন ভার্জিল ফন ডাইক।

এই গোলের দ্বৈরথে পেরিসিচের কাছে ফন ডাইক শুধু পরাস্তই হননি, বরং দৃষ্টিকটুভাবে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মাঠে পড়েও যান। ডাচ ডিফেন্ডারের নাকাল হওয়ার এই দৃশ্য যেন চলতি মৌসুমে ডিফেন্ডারদের হতশ্রী দশার প্রতীক। যেখানে চলতি মৌসুমে এরই মধ্যে ভেঙে গেছে প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচপ্রতি গোলের রেকর্ডও।

গত বুধবার পর্যন্ত হিসাব বিবেচনায় নিলে ম্যাচপ্রতি এই মৌসুমে গোল হয়েছে রেকর্ড ২.৮৪ করে। যা প্রিমিয়ার লিগ যুগে তো বটেই, সব মিলিয়ে ১৯৬৭–৬৮ মৌসুমের পর যা সর্বোচ্চ। প্রিমিয়ার লিগে এবারের আসরে গোলসংখ্যা বাড়ায় বড় ভূমিকা নিশ্চিতভাবে আর্লিং হলান্ডের। তবে এককভাবে সব কৃতিত্ব হলান্ডকে দেওয়ার সুযোগও নেই। একজন খেলোয়াড়ের পক্ষে এককভাবে গোটা মৌসুমের রেকর্ড বুক বদলে দেওয়ার সুযোগ সামান্যই।

আরও পড়ুনঃ  ভারতে আসছে না মেসির আর্জেন্টিনা!

এখানে তাই অবদান আছে বাকিদেরও। ক্রিস্টাল প্যালেসের কথাই ধরা যাক। রয় হজসন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে গত ৬ ম্যাচে ক্লাবটি এককভাবেই করেছে ১৩ গোল। সব মিলিয়ে গত বুধবার পর্যন্ত প্রিমিয়ার লিগে ম্যাচ খেলা হয়েছে ৩৩৪টি। আর এ ম্যাচগুলোতে গোল হয়েছে ৯৪৯টি।

শুধু এটুকুই নয়। এ মৌসুমে শীর্ষ ছয় দলের নিজেদের মধ্যকার খেলাগুলোর ওপর চোখ রাখলেই গোলবন্যার আসল চিত্রটা পাওয়া যাবে। নামে ফুটবল ম্যাচ হলেও দিন শেষে খেলাগুলো বাস্কেট বলের মতোই ফল নিয়ে এসেছে। এই দলগুলোর খেলা ২৯টি ম্যাচে গোল হয়েছে ১০৯টি, ম্যাচপ্রতি গোলসংখ্যা ৩.৭৬।

আধুনিক ফুটবলে গোল না হওয়া নিয়ে ফুটবল বিশ্লেষকদের অনেকের মধ্যে বেশ আক্ষেপ ছিল। কয়েক বছর আগেও নানা নিয়মের বেড়াজালে জালের ঠিকানা খুঁজে নিতে হাঁসফাঁস করত বলগুলো। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বদলে গেছে দৃশ্যপট। প্রিমিয়ার লিগের মতো প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক খেলায়ও এখন নিয়মিত গোলবন্যায় ভাসছে–ভাসাচ্ছে ক্লাবগুলো।

চলতি মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগের চেয়ে ম্যাচপ্রতি গোলে এগিয়ে আছে কেবল বুন্দেসলিগা, যাদের ম্যাচপ্রতি গোলসংখ্যা ৩.১২। এরপর দুইয়েই আছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ। ২.৮ গোল নিয়ে তালিকার তিনে আছে মেসি–নেইমার–এমবাপ্পেদের ফরাসি লিগ ‘আঁ’। পরের দুটি স্থান যথাক্রমে সিরি ‘আ’ (২.৫১) এবং লা লিগার (২.৪৯)।

আরও পড়ুনঃ  একই দিনে শুরু হচ্ছে আইপিএল ও পিএসএল, প্রভাব পড়বে বাংলাদেশ সিরিজে

প্রশ্ন হচ্ছে, প্রিমিয়ার লিগে গোলের ধারায় এমন পরিবর্তনের কারণ কী? আক্রমণভাগের খেলোয়াড়েরা কি অনেক ভালো করছেন, নাকি ডিফেন্ডাররা তাঁদের কাজ ভুলে বসে আছেন? অবশ্য এর জন্য অনেকে চাইলে আধুনিক ফুটবলের কলাকৌশলকেও দুষতে পারেন। যেখানে ডিফেন্ডাররা রক্ষণ সামলানোর বদলে আক্রমণেই বেশি অবদান রাখছেন।

২০১২–১৩ মৌসুমের দিকে ফিরে তাকালে চিত্রটা আরও স্পষ্ট হবে। সেবার যেসব খেলোয়াড় ম্যাচপ্রতি সবচেয়ে বেশি পাস দিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে মাত্র নয়জন ছিলেন ডিফেন্ডার, যেখানে সেন্টারব্যাক ছিলেন ছয়জন। ১০ বছর পর এই চিত্র পুরোপুরিভাবেই বদলে গেছে। এ মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগে যে ৫০ জন খেলোয়াড় ম্যাচপ্রতি সবচেয়ে বেশি পাস দিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ৩৭ জন হচ্ছেন ডিফেন্ডার, যার দুই–তৃতীয়াংশই আবার সেন্টারব্যাক। এই তালিকার সেরা ২০–এ মিডফিল্ডার আছেন মাত্র ৩ জন। ম্যানচেস্টার সিটির রদ্রি, চেলসির এনজো ফার্নান্দেজ এবং লিভারপুলের থিয়াগো আলকান্তারা।

আর যেসব দলের ডিফেন্ডাররা সেরা ৫০–এ জায়গা পেয়েছেন, সেই দলগুলো হলো, ব্রাইটন, লিভারপুল, ম্যানচেস্টার সিটি, চেলসি, আর্সেনাল, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, টটেনহাম হটস্পার, লেস্টার সিটি, ফুলহাম, ক্রিস্টাল প্যালেস এবং উলভস। সহজ কথায় প্রিমিয়ার লিগের অর্ধেকের বেশি দলের ডিফেন্ডাররা এই তালিকায় জায়গা পেয়েছেন। অবশ্য এর মানে এটা নয় যে বল প্লেয়িং ডিফেন্ডাররা শুধু এই ক্লাবগুলোতেই সীমাবদ্ধ।

আরও পড়ুনঃ  অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত আইপিএল

অতিরিক্ত গোল হজম করার আরেকটি বড় কারণ গোল কিক। একটা সময় ছিল, যখন গোল কিকে গোলকিপার লম্বা শটে বলকে মাঝমাঠে পাঠিয়ে দিতেন। কিন্তু এখন দলগুলো আক্রমণের শুরুই করে গোল কিক থেকে। শর্ট বা ছোট পাসে তারা নিজেদের ডি–বক্স থেকেই আক্রমণে চোখ রেখে খেলা শুরু করে। এ ছাড়া নিয়মের পরিবর্তনের ফলে ডিফেন্ডাররা গোলরক্ষকের কাছ থেকে বল নেওয়ার জন্য নিজেদের পেনাল্টি বক্সে অবস্থান নিতে পারবেন।

আর গোল কিকে সরাসরি অফসাইডের ফাঁদে পড়ার সুযোগও নেই। এর ফলে অনেক সময় বলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দলগুলোকে গোল হজম করতে হচ্ছে। কৌশল পরিবর্তনের এ ধারায় সামনের দিনগুলোতেও হয়তো এমন গোলবন্যা আরও দেখা যাবে। যেখানে নিখুঁত ডিফেন্ডাররা আরও বেশি অকার্যকর হয়ে পড়তে পারেন।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল সময়ের কথা ২৪ লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন somoyerkotha24news@gmail.com ঠিকানায়।