নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

বাংলাদেশ শুক্রবার। রাত ২:২২। ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫।

কালুহাটি পাদুকা পল্লী লোকসানের আশঙ্কা

এপ্রিল ৯, ২০২৩ ১২:৩৬
Link Copied!

স্টাফ রিপোর্টার: বড়াল নদের কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা কালুহাটি গ্রাম। গ্রামে ছোট্ট ছোট্ট ঘর, তার মধ্যে বসে নানাবয়সী মানুষ তৈরি করছে বাহারি রঙের স্যান্ডেল ও জুতা। নারী-পুরুষের বাহারি জুতা তৈরি করা এ গ্রামটি আশপাশের সবার কাছে ‘পাদুকা পল্লী’ নামেই পরিচিত। এখানকার তৈরি বাহারি জুতা স্যান্ডেল যায় গোটা উত্তরবঙ্গসহ রাজধানীতেও। গত কয়েক বছরে অভাবী গ্রামের চেহারা পাল্টে কালুহাটি এখন ঝকঝকে কর্মচাঞ্চল্যের সাফল্যমতি একটি গ্রাম।

স্থানীয়রা স্বপ্ন দেখছেন একদিন বিশ্ববাজারে রপ্তানি হবে কালুহাটির তৈরি পাদুকা। সেই স্বপ্ন নিয়েই এগিয়ে চলেছে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা। তবে ছন্দপতন ঘটেছে এ বছর। রোজার শেষ মহুর্তেও কাজ নেই কালুহাটি পাদুকা পল্লীতে। ফলে চরম সংকট চলছে এ শিল্পে।

সরজমিনে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার নিমপাড়া ইউনিয়নের কালুহাটি গ্রামে প্রবেশ করলেই চোখে পড়ে জুতা-স্যান্ডেল তৈরির বিভিন্ন কারখানার সাইনবোর্ড। একেকটি ঘরই যেন একেক কারখানা! আর কারখানা ঘিরেই তাদের জীবন জীবিকা আর স্বপ্ন। সারাবছরই কর্মচাঞ্চল্য থাকা গ্রামটিতে রোজা এবং ঈদ কেন্দ্র করে ব্যস্ততা বেড়ে যায় কয়েক গুণ বেশি। তবে এ বছর ব্যস্ততার ছন্দপতন ঘটেছে।

আরও পড়ুনঃ  রাকসু-চাকসু নির্বাচন নিয়ে কোনো উদ্বেগ নেই : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

বৈশ্বিক মহামারী করোনা ও আধুনিকতার বাজারে এ শিল্পে ভাটা পড়েছে। কর্মচঞ্চল এ গ্রামে এখন অলস সময় পার করতে হচ্ছে পাদুকা শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের। একদিকে জুতা সেন্ডেল তৈরীর কাচামালের দাম উর্দ্ধমুখি, আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাব ও করোনার কারনে চাহিদা কমে গেছে। ফলে চরম দুর্বিসহ ভাবে চলছে জীবনমান।

সরজমিনে গিয়ে পাদুকা শিল্পের জড়িতদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সারা বছর কাজ কম থাকলেও রোজার ঈদকে ঘিরে পাদুকা শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের থাকে অনেক আশা ভরসা। তবে গত দুই বছর ধরে বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে এ শিল্পের দুর্দিন শুরু হয়েছে। কর্মহীন হতে হচ্ছে এর সঙ্গে জড়িতদের। ফলে অনেক কারখানাকে গুনতে হচ্ছে ব্যাপক লোকসান। আর এ লোকসান উঠাতে না পারলে অনেককে পথে বসতে হবে।

আরও পড়ুনঃ  ভাঙ্গার সীমানা ইস্যুতে ইসিতে ডিসির চিঠি

কালুহাটি পাদুকা শিল্পের সাধারন সম্পাদক সোহেল রানা বলেন, আমরা সারা বছর অনেক কষ্টে কারখানা গুলো খুলে রাখি বছরের দুটি ঈদকে ঘিরে। তবে গত কয়েক বছর ধরে বৈশ্বিক করোনার কারনে এ শিল্পে ব্যাপক ক্ষতির প্রভাব পড়েছে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে জুতা সেন্ডেল তৈরীর প্রতিটি উপকরণের দাম বেড়েছে কয়েক গুন। অপর দিকে ভারতীয় কিছু জতা সেন্ডেল বাজারে এসে দাম কমিয়েছে।

এতে বাজারে টিকিয়ে থাকা বড়ই কঠিন। তা ছাড়া মার্কেটে বাকীতে পন্য বিক্রি করা সেই টাক্ ানা পাওয়ায় অনেক কারখানা আজ বন্ধের পথে। এক রমজানেই ৩০ কোটি টাকার ব্যবসা নেমে এসেছে অর্ধেকে।

তিনি আরও বলেন, আমরা বিভিন্ন জটিলতা আর অপরিকল্পিত ভাবে কারখানা গুলোর ব্যবসা করে আসলেও ২০১০ সালে চারঘাট-বাঘার সাংসদ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি মহোদ্বয় আমাদের সার্বিকভাবে দিকনিদের্শনা দিয়ে এসএমই ফাউন্ডেশনের মাধমে এ শিল্পের বিকাশ ঘটেছেন।

তিনি বলেন, চারঘাট-বাঘার অভিভাবক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সব সময় আমাদের খোজ খবর নেন। তার পরেও বৈশ্বিক করোনায় গোটা বিশ্ব যখন টালমাটাল তখন আমাদের দেশের জুতা শিল্পের অবস্থাও করুন। অনেক জুতা-সেন্ডেলের দোকানপাট এখনো ব্যবসা সফল করতে পারছে না। ফলে এ বছর আমাদের লোকসান অনেক।

আরও পড়ুনঃ  যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও জোরদার করতে চায় বাংলাদেশ : প্রধান উপদেষ্টা

জানা যায়, পাদুকার উন্নয়নে ২০১০ সালে চারঘাট-বাঘা আসনের সাংসদ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব শাহরিয়ার আলম ও এসএমই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে অনেকেই ট্রেনিং পেয়েছেন। একই সময় ব্যবসায়ীদের এক ছাতার নিচে আনতে কালুহাটি পাদুকা শিল্প মালিক সমবায় সমিতি লি. গঠন করা হয়। যার সদস্য বর্তমানে ১১৭।

বিশ্ববিখ্যাত ব্র্যান্ড হুগো বসের জুতায় ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ দেখে নিজের ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে এই কালুহাটির পাদুকা পল্লীর সফলতাকে আরও বড় কিছু করার স্বপ্নের কথা লেখেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও স্থানীয় সাংসদ শাহরিয়ার আলম।

তার স্বপ্নের সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও আশায় বুক বেঁধেছেন একদিন দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশে^র বিভিন্ন বাজারে যাবে কালুহাটির তৈরি জুতা।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল সময়ের কথা ২৪ লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন somoyerkotha24news@gmail.com ঠিকানায়।