নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

ঢাকা রবিবার। রাত ১০:২২। ৪ মে, ২০২৫।

একসঙ্গে ১৫ জোড়া তরুণ-তরুণীর যৌতুকবিহীন বিয়ে

Asha Mony
মার্চ ৬, ২০২৪ ৪:১৮ অপরাহ্ণ
Link Copied!

অনলাইন ডেস্ক : রংপুরে একসঙ্গে ১৫ জোড়া তরুণ-তরুণীর যৌতুকবিহীন বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে; যাদের অধিকাংশই দরিদ্র পরিবারের সন্তান। মঙ্গলবার (৫ মার্চ) রাতে শেখ রাসেল ইনডোর স্টেডিয়ামে আনুষ্ঠানিকতা শেষে নব দম্পতিদের স্বাবলম্বী করতে নগদ অর্থ, ভ্যান, সেলাই মেশিনসহ সংসারের নানা উপকরণও তুলে দেওয়া হয়।

রংপুরে প্রথমবারের মত জাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশে একসঙ্গে ১৫ জোড়া তরুণ-তরুণীর বিয়ের আয়োজনে করে আল-খায়ের ফাউন্ডেশন। এই আয়োজন ঘিরে শেখ রাসেল ইনডোর স্টেডিয়ামে ছিল সাজ-সাজ রব।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সরেজমিনে দেখা যায়, সাদা কাপড়ে ঘেরা পুরো স্টেডিয়াম প্রাঙ্গণ। সেখানে সারি করে রাখা ভ্যান, সেলাই মেশিন, গ্যাসের চুলা, বালতি, প্লেট-গ্লাস, জগ, তোশকসহ সংসারের প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র। প্রতিটি ভ্যানে এক-দুই করে নম্বর সাটিয়ে দেওয়া রয়েছে। ইনডোর স্টেডিয়াম ভবনের সামনে ফুলে সজ্জিত গেট। সিঁড়ি মাড়িয়ে স্টেডিয়ামের ভেতরে ঢুকতেই দেখা মেলে এক অন্যরকম মিলন মেলার।

রাজকীয়ভাবে সাজানো মঞ্চে সারি করে বিয়ের পাঞ্জাবী, পায়জামা, জুতা, পাগড়ি পড়ে বসে আছে ১৫ জন বর। অপর আরেকটি ঘরের ভেতরে বিয়ের সাজে ১৫ জন কনে। সকলেরই হাস্যোজ্জ্বল মুখ। মঞ্চের বিপরীতে বসে ছিল ৩০ পরিবারের সদস্যরা। আরও ছিলেন রংপুরের প্রশাসনের কর্মকর্তা, সুশীল সমাজ, সাংবাদিকসহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষ।

স্টেডিয়ামের বাইরে বর-কনের পরিবারসহ বিয়েতে আসা ৩ শতাধিক অতিথির জন্য চলছিল রান্না। পোলাও, মুরগির রোস্ট, গরুর মাংস, জর্দা পোলাওসহ নানা খাবার তৈরিতে ব্যস্ত বার্বুচিরা। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা, নবদম্পতিকে শুভেচ্ছা জানানো, খাওয়া-দাওয়ার আয়োজনে শামিল হন অতিথিরা।

এমন বর্ণিল আয়োজনে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে পেরে উচ্ছ্বসিত ছিলেন নব-দম্পতিরা। রংপুর সদর উপজেলার পাগলাপীর বিড়াবাড়ি এলাকার কনে রশিদা বেগমের মামাতো বোন খাদিজা আক্তার বলেন, গরীব ঘরের সন্তান আমরা। আমার মামাতো বোনের আয়োজন করে বিয়ে দেওয়া আমাদের জন্য অনেক কষ্টের হতো। এটিকে সহজ করে দিয়েছে আল-খায়ের ফাউন্ডেশন। তারা যৌতুকবিহীন বিয়ের ব্যবস্থা করেছে, আর্থিক ও সাংসারিক সহযোগিতা করেছে। এতে করে মেয়ে ও ছেলে দুই পরিবারই খুশি। এভাবে যদি আরও গরীব মানুষকে সহযোগিতা করে তাহলে যৌতুকবিহীন সমাজ গড়া সম্ভব হবে।

একই উপজেলার হরকলি পীরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা কনে নার্গিস আক্তারের নানি খাদিজা বেগম বলেন, ‘মোর জামাই মারা গেইচে অনেক বছর হইল। বেটি একটা তাংকু (তামাক) কোম্পানিত চাকরি করি সংসার চালায়। বেটির দুই বেটি ও এক ব্যাটা। বাপ মরা একটা বেটির আইজ বিয়া হইল। ম্যালা খুশি লাগছে। বিয়া হওয়ার সাতে সংসারের ম্যালা জিনিসও পাইল। ওমরা সুখে থাকপে।’

নগরীর জুম্মাপাড়ার এলাকার কনে নুসরাত বেগম বলেন, এত বড় আয়োজন করে আমার বিয়ে এটি ভাবি নাই। এ আয়োজন অনেক ভালো লেগেছে। সেই সঙ্গে সংসারের জিনিসপত্র পেয়ে অনেক ভাল লাগছে।

সদর উপজেলার পাগলাপীর কিশামত হরকলি গ্রামের বাসিন্দা বর মারজান মিয়া বলেন, ‘ডিমান্ড ছাড়া বিয়া করবার পারছি। এ্যালা বুক ফুলি চলবার পামো। কাইয়ো কিছু কবার পাবার নয়। মোর ভালই আনন্দ লাগতোছে। এমন করি বিয়া হইলে যৌতুক সমাজ থ্যাকি উঠি যাইবো। যৌতুকের জন্তে কোনো মেয়ে নির্যাতন হবার ন্যায়।’

পাগলাপীর মুলাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা বর আজমান হোসেন বলেন, যৌতুক বিহীন বিয়ে করতে পেরে আনন্দ লাগছে। তারা চলার জন্য ভ্যান, সেলাই মেশিনসহ অন্যান্য জিনিস দিয়েছে। এসব দিয়ে সুখে-শান্তিতে সংসার করতে পারব।

এই বিয়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- রংপুর অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার আবু জাফর, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান, রংপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হাবিবুল হাসান রুমি, বিসিবির পরিচালক, জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. আনোয়ারুল ইসলাম, সরকারি বেগম রোকেয়া কলেজের শিক্ষক আজহারুল ইসলাম দুলাল, রংপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মেরিনা লাভলীসহ বিভিন্ন পেশার সুধীজন।

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান বলেন, যৌতুক নেওয়া রাষ্ট্রীয়ভাবে বেআইনি কাজ। তবে সমাজে ব্যাধি হয়ে এটি এখনও রয়েছে। আল-খায়ের ফাউন্ডেশন যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে আমি তার সাধুবাদ জানাই। যেহেতু যৌতুক বেআইনি কাজ, এটি বন্ধ করা পুলিশের কাজ। আমি মনে করি এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে একটি সুস্থ ধারার সূচনা হলো। আমরা এ কাজকে শুধু সমর্থনই করি না। মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে আমরা নব-দম্পতির জন্য উপহার দিয়েছি। আশা করছি ভবিষ্যতে সব বিয়েই যৌতুকবিহীন হবে।

অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার আবু জাফর বলেন, আজকের যৌতুকবিহীন বিয়ের বিষয়টি ব্যাপকভাবে প্রচার হলে সমাজ থেকে যৌতুক ব্যক্তি দূর হবে। যৌতুক প্রথা বন্ধে এ ধরনের উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সরকারি-বেসরকারি, ব্যক্তি উদ্যোগে এমন আয়োজন হলে প্রশাসন সব সময় তাদের পাশে থাকবে।

জানা যায়, নানা মানবিক কাজের পাশাপাশি কয়েক বছর ধরে আল-খায়ের ফাউন্ডেশন যৌতুকমুক্ত বিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে যাচ্ছে। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি সিলেটে ২৫ জোড়া যৌতুকমুক্ত বিয়ের সফলভাবে আয়োজন সম্পন্ন করেছে এ সংস্থাটি। এরই ধারাবাহিকতায় রংপুর জেলার ১৫ জোড়া যৌতুকমুক্ত বিয়ের আয়োজন করা হয়। এতে অংশ নেওয়া বর ও কনে উভয়ে অসচ্ছল পরিবার থেকে আসা। এসব অসচ্ছল পরিবারের কন্যা দায়গ্রস্ত পিতার দুশ্চিন্তা লাঘবে বিনা খরচে বিয়ের আয়োজনসহ নব-দম্পতিকে স্বাবলম্বী করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে নৈশভোজের পর গাড়িতে করে বর-কনে ও পরিবারের সদস্যদের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল সময়ের কথা ২৪ লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন somoyerkotha24news@gmail.com ঠিকানায়।