শাজাহান পাঠান, বড়াইগ্রাম (নাটোর) প্রতিনিধি: নাটোরের বড়াইগ্রামে দেশব্যাপী আলোচিত মাদরাসার ১ম শ্রেণির ছাত্রী আকলিমা আক্তার জুঁই (৭) ধর্ষণ ও হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। পহেলা বৈশাখ উদযাপনের জন্য যৌনকর্মী ও নতর্কী না পেয়ে ৪ কিশোর ও ১ যুবক জুঁইকে বেছে নেয়। বিকেল ৫টার দিকে বাড়ির পাশে আম বাগানে আম কুড়াতে গেলে বাগানের মধ্যেই নেশার আসরে থাকা ওই ৫ জন জুঁইকে দেখতে পায়। তারা জোরপূর্বক জুঁই’র মুখ চেপে ধরে কোলে উঠিয়ে পাশের কলা বাগানে নিয়ে যায়। তারা মধ্য রাত পর্যন্ত জুঁই’র শরীর নিয়ে আদিম অসভ্যতায় মেতে ওঠে, পালাক্রমে ধর্ষণ করে। ওই ৪ কিশোর ও ১ যুবক নেশাগ্রস্থ অবস্থায় এ পাশবিক নির্যাতন চালায়। এক পর্যায়ে জুঁই অজ্ঞান হয়ে পড়লে পড়নের প্যান্ট গলায় পেঁচিয়ে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে। লাশ যেনো কেউ চিনতে না পারে তার জন্য ট্রাক্টর থেকে আনা ব্যাটারীর এসিড দিয়ে মুখমন্ডল পোড়ানোর চেষ্টা করে। নির্মম ও পৈশাচিক এই ঘটনার ৫ দিনের মাথায় বড়াইগ্রাম থানা, চাটমোহর থানা ও নাটোর ডিবি পুলিশের যৌথ অভিযানে ঘটনার সাথে সরাসরি জড়িত ৫ জনকে আটক করা হয়। ওই আটককৃতরা পুলিশের কাছে উপরোক্ত বিবরণ তুলে ধরে ধর্ষণ ও হত্যার কথা স্বীকার করেছে বলে জানান চাটমোহর থানার অফিসার ইনচার্জ মঞ্জুরুল আলম।
অফিসার ইনচার্জ মঞ্জুরুল আলম আরও জানান, ঘটনার সাথে জড়িত ও গ্রেফতারকৃত ৫ জন হলেন, বড়াইগ্রাম উপজেলার দিয়াড়গাড়ফা গ্রামের শাহীন আলীর ছেলে সিয়াম হোসেন (১৩), গাড়ফা উত্তরপাড়া গ্রামের আয়নাল হোসেনের ছেলে শেখ সাদী (১৬), শফিকুল ইসলামের ছেলে আব্দুল্লাহ (১৬), সুলতান হোসেনের ছেলে সোহেল রানা (২৫) এবং গাড়ফা দক্ষিণপাড়া গ্রামের দুলাল হোসেনের ছেলে সাকিব হোসেন (১৬)। এদের মধ্যে সিয়াম স্থানীয় ডিকে উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র, শেখ সাদী ও আব্দুল্লাহ অপকর্মের দায়ে স্থানীয় মাদরাসা থেকে বহিষ্কৃত। সোহেল বিবাহিত ও দিনমজুর এবং সাকিব ট্রাক্টর চালকের সহকারী।
তিনি আরও বলেন, যুবক সোহেল ও ৩ কিশোর শেখ সাদী, আব্দুল্লাহ, সাকিব পহেলা বৈশাখের আনন্দ করার পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে নিজেরা টাকা তুলে যৌনকর্মী ও নতর্কী ভাড়া করার চেষ্টা করে এবং নেশাদ্রব্য গাঁজা কিনে। তারা নিজেরা যৌন উত্তেজক ঔষধও সেবন করে। ঘটনার দিন (১৪ এপ্রিল) বিকেলে তারা জুঁইয়ের বাড়ির পাশের আমবাগানে বসে গাঁজা সেবন করছিল। হঠাৎ জুঁই দাদীর বাড়ি থেকে বেড়ানো শেষে সেখানে আম কুড়াতে যায়। এ সময় শেখ সাদি জুঁইকে জোরপূর্বক কোলে তুলে পাশেই দুলালের কলাবাগানে নিয়ে যায় এবং চারজন মিলে তাকে ধর্ষণ করে। এরপর তারা শিশুটিকে ধরাধরি করে পাশের ভূট্টার জমিতে নিয়ে যাওয়ার সময় জুঁই’র বাড়ির পাশে নানাবাড়িতে বেড়াতে আসা সিয়াম বিষয়টি দেখে ফেলে। পরে তারা সিয়ামকেও প্রলুব্ধ করে শিশুটিকে পুনরায় ধর্ষণ করায়। তারা দীর্ঘসময় জুঁই’র শরীর নিয়ে আদিম অসভ্যতায় মেতে ওঠে। এরপর তারা জুঁইয়ের পরণের লাল রঙের প্যান্ট গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে তাকে হত্যা করে এবং ঘাড় মটকে মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর এসিড জাতীয় দাহ্য পদার্থ দিয়ে তার মুখ ঝলসে দেয়। পরে তারা ভূট্টার জমিতে বিবস্ত্র লাশটি উপুড় করে ফেলে রেখে চলে যায়।
উল্লেখ্য, গত ১৪ এপ্রিল দাদীর বাড়িতে যাওয়ার জন্য বের হয়ে নিখোঁজ হয় বড়াইগ্রামের চান্দাই ইউনিয়নের গাড়ফা প্রবাসী জাহিরুল ইসলামের শিশুকন্যা জুঁই। পরদিন বাড়ি থেকে ৩০০ গজ দুরে চাটমোহরের রামপুর বিলের একটি ভুট্টা ক্ষেতে তার বিবস্ত্র ও মুখমণ্ডল ঝলসানো লাশ পাওয়া যায়। রাতে জুঁইয়ের মা বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেন। জুঁই’র ওপর এই নির্মমতা ও পৈশাচিকতার প্রতিবাদে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে নাটোরের সর্বস্তরের মানুষ। দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলাতেও এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন হয়। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনার রহস্য উদঘাটনে ও অপরাধীদের চিহ্নিত করতে থানা পুলিশ ও ডিবি পুলিশ মাঠে নামে। ব্যাপক অনুসন্ধানের পর ঘটনার ৫ দিনের মাথায় ঘটনার সাথে সরাসরি জড়িত ৫ জনকে আটক করে ও জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গ্রেফতার দেখিয়ে পাবনা জেল হাজতে প্রেরণ করে পুলিশ।