নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

ঢাকা সোমবার। রাত ৪:৪১। ৫ মে, ২০২৫।

রাজশাহীতে দুই পশুর হাট ঘিরে উত্তেজনা, চরম দুর্ভোগে গরু ব্যবসায়ীরা

subadmin
মে ৪, ২০২৫ ১১:১৫ অপরাহ্ণ
Link Copied!

স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহীতে সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন সিটিহাট এবং পবা উপজেলা প্রশাসনের অধীন দামকুড়া পশুহাটকে ঘিরে দুই পক্ষের ইজারাদারদের মধ্যে তীব্র দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে রাস্তায় গরুবাহী গাড়ি আটকে থাকা, গরু জোর করে হাটে নেওয়া, ক্রেতা-বিক্রেতা ও চালকদের হয়রানিসহ নানা অভিযোগ উঠে এসেছে।

জানা গেছে, দামকুড়া পশুহাট চালু হয়েছিল ১৯৮৯ সালে। ২০০৫ সালে সিটি কর্পোরেশনের সিটিহাট চালু হলে একটি প্রভাবশালী মহল দুই হাটের ইজারা নিয়ে দামকুড়া হাট বন্ধ রাখে। দীর্ঘ ১৯ বছর পর এবার দুই হাটই আলাদা দুই পক্ষের ইজারায় পড়ায় উত্তেজনা দেখা দেয়।

সিটিহাট ইজারা পেয়েছেন শওকত আলী ও তার অংশীদাররা, আর দামকুড়া হাট ইজারা পেয়েছেন শাহ্ জাহান আলী। দুই হাটই বসে সপ্তাহে রোববার ও বুধবার।

দামকুড়া হাটের ইজারাদার শাহ্ জাহান আলী অভিযোগ করেছেন, সিটিহাটের লোকজন কদমশহর, কাঁকনহাট, পলাশবাড়ি, দারুশা হাটসহ অন্তত ১০টি স্থানে অবস্থান নিয়ে গরুবাহী নসিমন-করিমন থামিয়ে জোর করে তাদের হাটে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি এই বিষয়ে ২৯ এপ্রিল বিভাগীয় কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন, যার অনুলিপি জেলা প্রশাসক, পুলিশ কমিশনার, পুলিশ সুপার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছেও পাঠানো হয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের মনাকষা থেকে গরু নিয়ে আসা ব্যবসায়ী কামাল বলেন, “আমরা সিটিহাটে যেতে চাচ্ছিলাম, কিন্তু কেউ গরুর গাড়ি আটকে দিয়ে দামকুড়া হাটে নিতে বাধ্য করছে। নতুন হাট সম্পর্কে আমরা অবগত না, তাই চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিতে চাই।”

একই অভিযোগ তুলেছেন অন্য ব্যবসায়ীরা। কেউ কেউ বলেন, গরু নামিয়ে হাটে ঢোকানোর পর আবার প্রতি গরু ৪০০ টাকা ছাড় দিয়ে হাট থেকে বের হয়ে সিটিহাটে যেতে হয়েছে।

রবিবার সকালেও মহাসড়কের বিভিন্ন মোড়ে দুই পক্ষের লোকজন অবস্থান নেয়। পরে দামকুড়া থানা পুলিশ গিয়ে যানবাহনগুলো নিজ নিজ গন্তব্যে যেতে নির্দেশ দেয়। তবে বেশিরভাগ গাড়িই শেষ পর্যন্ত সিটিহাটের দিকে চলে যায়।

এ ঘটনায় দামকুড়া হাটের ইজারাদার শাহ্ জাহান পুলিশের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, “পুলিশ সিটিহাটের পক্ষ নিচ্ছে এবং আমাদের হাটে গরু যেতে দিচ্ছে না।”

এ বিষয়ে দামকুড়া থানার ওসি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, “দুই পক্ষের মধ্যে হালকা উত্তেজনা হয়েছে। আমরা উপস্থিত থেকে গাড়িগুলোকে ব্যবসায়ীদের পছন্দ অনুযায়ী হাটে যেতে বলেছি।

দুপুরে দামকুড়া হাটে গিয়ে দেখা যায়, হাট প্রায় ফাঁকা। গরু কম, ক্রেতাও অনুপস্থিত। গোদাগাড়ীর গরু ব্যবসায়ী আবদুর রহমান বলেন, “সকালে গরু তুলে এখনও গাড়িতে বসে আছি। জোর করে এখানে আনা হয়েছে। কিন্তু এখানে তো ক্রেতাই নেই।

আরেক ব্যবসায়ী রাকিব আলী জানান, “আমরা সিটিহাটে যেতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আমাদের গাড়ি রাস্তায় আটকে দিয়ে এখানে নিয়ে এসেছে। পরে গরু প্রতি ছাড়ের টাকা দিয়ে আবার হাট ছেড়ে যেতে হয়েছে।

অপর দিকে সিটি হাটে স্বাভাবিক চিত্র দেখা গেছে। তবে রাস্তায় হয়রানির কথা জানিয়ে বলেন আমরা ব্যবসায়ীরা নিরাপদে ব্যবসা করতে চাই।দুইহাট কতৃপক্ষ এই সমস্যা সমাধান করলে আমরা ব্যবসা ভালোভাবে করতে পারবো।

দামকুড়া হাট ইজারাদার শাহ্ জাহান আলী দাবি করেন, “আমরা কাউকে গরু ধরে আনিনি। সিটিহাটের লোকজনই এই কাজ করছে। আমরা সরকারি নিয়ম মেনে হাট পরিচালনা করছি, নিজেদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতেই মাঠে নেমেছি।”

অন্যদিকে সিটিহাটের ইজারাদার শওকত আলী অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমরা কাউকে জোর করছি না। বরং ওরাই লাঠিসোটা নিয়ে গাড়ি আটকে রাখছে। ব্যাপারিরা যেন নিজের ইচ্ছেমতো হাটে যেতে পারে, সেই দাবি করছি।”

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ রকিবুল হাসান ইবনে রহমান বলেন, একই দিনে দুই হাট হওয়ায় এই জটিলতা তৈরি হয়েছে। তবে পুলিশ মাঠে রয়েছে এবং কেউ যেন বাধার সম্মুখীন না হয় তা নিশ্চিত করছে। তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো সংঘাত হয়নি, তবে প্রয়োজনে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রাজশাহীতে দুই পশুহাটের ইজারাদারদের দ্বন্দ্বে গরু ব্যবসায়ীরা নিরাপত্তাহীনতা, হয়রানি ও আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন। প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করলেও মাঠ পর্যায়ে সমন্বয়ের অভাব স্পষ্ট। দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে সামনে কোরবানির মৌসুমে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার নিতে পারে।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল সময়ের কথা ২৪ লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন somoyerkotha24news@gmail.com ঠিকানায়।