অনলাইন ডেস্ক : ভারত চলমান উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই কাশ্মীর সীমান্তে ‘ব্ল্যাকআউট’ মহড়া চালিয়েছে। এছাড়া পাকিস্তানে চেনাব নদীর পানির প্রবাহও থামিয়ে দিচ্ছে নয়াদিল্লি। জানা গেছে, এমন পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের দ্বারস্থ হচ্ছে ইসলামাবাদ।
পিটিআই এই খবর জানায়।
উত্তেজনা বাড়ছে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে। দেশ দু’টির পাল্টাপাল্টি নানা পদক্ষেপে ক্রমেই জটিল হচ্ছে পরিস্থিতি। গতকাল রোববার রাতে পাঞ্জাবের ফিরোজপুর সেনানিবাসে আধা ঘণ্টার জন্য ‘ব্ল্যাকআউট মহড়া’ চালিয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী।
এসময় বাসিন্দাদের সতর্ক করে আলো নিভিয়ে রাখতে বলা হয় পুরো এলাকায়। যুদ্ধকালীন সময়ে ব্ল্যাকআউট পদ্ধতি বাস্তবায়নে প্রস্তুতি ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করাই এই মহড়ার লক্ষ্য বলে জানিয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী।
এদিকে, বাগলিহার বাঁধের মাধ্যমে পাকিস্তানে চেনাব নদীর পানি প্রবাহ কমিয়ে দিয়েছে ভারত। জানা গেছে, একইভাবে কিশানগঙ্গা বাঁধের মাধ্যমে ঝিলম নদীর পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা করছে নয়াদিল্লি।
ভারতের সাম্প্রতিক এসব কর্মকাণ্ডকে ‘আগ্রাসী’ আখ্যা দিয়ে বিষয়টি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে তুলবে বলে জানিয়েছে রাশিয়ায় পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত। তিনি ইতোমধ্যে, জাতিসংঘে পাকিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধিকে বিষয়টি নিরাপত্তা পরিষদে তোলার নির্দেশ দিয়েছেন। জরুরি বৈঠক আয়োজনের নির্দেশ পেয়েছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত দেশটির স্থায়ী প্রতিনিধি আসিম ইফতিখার।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ভারতের সামরিক উসকানি, হামলার পর বক্তব্য ও সিন্ধু চুক্তি লঙ্ঘন—সবই নিরাপত্তা পরিষদের আলোচনায় তোলা হবে।
গেল ২২ এপ্রিল পেহেলগামে বন্দুক হামলায় ২৬ পর্যটক নিহত হন। এ ঘটনায় ভারত দোষ চাপায় পাকিস্তানের ওপর। তবে, অভিযোগ অস্বীকার করে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছে ইসলামাবাদ।
ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার মধ্যে বিমান বাহিনী প্রধানের সাথে মোদির বৈঠক করেছেন।
জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগাম হামলার জেরে ভারত-পাকিস্তানের উত্তেজনার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে দেখা করেছেন বিমান বাহিনী প্রধান এপি সিং। রোববার মোদির সঙ্গে দেখা করেন তিনি।
এর আগে নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল দীনেশ কে ত্রিপাঠীর সাথে আলাদা বৈঠক হয় মোদির। এর ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে এপি সিং এর সাথে বৈঠক করলেন মোদি। এছাড়া গত সপ্তাহে সেনা প্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদীর সাথেও বৈঠক করেন মোদি।
যদিও বৈঠকের আনুষ্ঠানিক বিবরণ গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়নি, তবে এটিকে ২২ এপ্রিলের হামলার প্রতিক্রিয়া নিয়ে চলমান আলোচনার অংশ হিসাবে দেখা হচ্ছে।
যেখানে বন্দুকধারীরা পেহেলগামে একদল পর্যটকের উপর গুলি চালিয়ে ২৬ জনকে হত্যা করে।
এই হামলার পর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। এরইমধ্যে দেশ দু’টি পাল্টাপাল্টি বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ঘোষণা করেছে।
এর আগে পাকিস্তান দাবি করেছে তাদের কাছে ‘নির্ভরযোগ্য’ গোয়েন্দা তথ্য আছে, ভারত ইসলামাবাদে সামরিক আক্রমণ চালাতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী মোদি এই সপ্তাহের শুরুতে অনুষ্ঠিত এক উচ্চ-স্তরের বৈঠকে প্রতিরক্ষা নেতৃত্বকে স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন যে, ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর আক্রমণের প্রকৃতি, লক্ষ্যবস্তু এবং সময় নির্ধারণের ‘সম্পূর্ণ অপারেশনাল স্বাধীনতা’ রয়েছে।
এছাড়া হামলার পর সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছিল ভারত সরকার।
আগের বৈঠকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল, প্রতিরক্ষা প্রধান জেনারেল অনিল চৌহান এবং সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমান বাহিনীর প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।
২০১৬ সালে, জম্মু ও কাশ্মীরের উরিতে ভারতীয় সৈন্যদের উপর হামলার পর এবং ২০১৯ সালে পুলওয়ামা বোমা হামলার পর বালাকোটে ভারত নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালায়।