অনলাইন ডেস্ক : জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট হাতে সেঞ্চুরির হাঁকানোর পর বল হাতে ৫ উইকেট নেন মেহেদী হাসান মিরাজ। সাগরিকা টেস্টের তৃতীয় দিনটি ছিল মিরাজময়! তার এমন অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে ভর করেই চট্টগ্রাম টেস্ট তিন দিনেই ইনিংস ব্যবধানে জিতেছে বাংলাদেশ। এই জয়ে ১-১ ব্যবধানে সিরিজ ভাগাভাগি করল দুই দল। একইসঙ্গে ঘরের মাঠে ৬ টেস্ট হারের পর জয়ের স্বাদ পেল ফিল সিমন্সের শিষ্যরা।
চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ইনিংসে ২২৭ রান করেছিল জিম্বাবুয়ে। জবাবে বাংলাদেশ নিজেদের প্রথম ইনিংসে দুই সেঞ্চুরিতে ৪৪৪ রান করে। ২১৭ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ১১১ রানে অলআউট হয় জিম্বাবুয়ে। ফলে স্বাগতিক বাংলাদেশ ইনিংস এবং ১০৬ রানের ব্যবধানে জিতেছে।
এর আগে সিলেটে প্রথম টেস্টে ৩ উইকেটে হারের পর সমালোচনার মুখে পড়েছিল নাজমুল হোসেন শান্ত’র দল। দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট জিতে কিছুটা হলেও তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে পারছে শান্ত-মিরাজরা। যদিও শান্ত হতাশা প্রকাশ করেছেন দুই টেস্টে জিততে না পারায়। এই সিরিজে বাংলাদেশ দলের প্রাপ্তি কী সেই আলোচনা চলছে এখন। একনজরে তাতে চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক।
ওপেনিংয়ে সেঞ্চুরি
সাম্প্রতিক সময়ে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের ব্যর্থতার বড় কারণ নড়বড়ে ব্যাটিং। যার মধ্যে ওপেনিং জুটি ছিল চূড়ান্ত অস্বস্তির নাম। তবে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে কিছুটা স্বস্তি দিয়েছেন দুই ওপেনার। সিরিজের মাঝপথে টাইগার স্কোয়াডে ডাকা হয়েছিল অভিজ্ঞ ব্যাটার এনামুল হক বিজয়কে। সাদমান ইসলামের সঙ্গে ওপেনিংয়ে নামা এই ব্যাটার সাদা পোশাকে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলেছেন। যদিও থিতু হয়েও আউট হয়েছেন ৩৯ রানে।
৮৬৪ দিন পর অবশেষে এমন সেঞ্চুরি পেল বাংলাদেশ
দুজনে মিলে সেদিন প্রথম সেশনে কোনো উইকেট পড়তে দেননি বাংলাদেশের। ১৮৯ বলে গড়েন ১১৮ রানের জুটি। ২০২২ সালের পর এবারই প্রথম যে উদ্বোধনী জুটিতে ১০০ পেরোয় বাংলাদেশ। তিন বছর পর টেস্ট দলে ফিরে বিজয় হাফসেঞ্চুরির আক্ষেপ নিয়ে আউট হলেও, সাদমান তুলে নেন দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরি। পরে আউট হন ক্যারিয়ারসেরা ১২০ রান করে।
মিরাজের সেঞ্চুরির সঙ্গে ৫ উইকেট
চট্টগ্রাম টেস্টে বাংলাদেশ দলের প্রথম ইনিংসে মিডল অর্ডারে অবিশ্বাস্য ধস হয়েছিল। পরে হাল ধরেন মেহেদী মিরাজ। দলের টেলএন্ডার ব্যাটার তাইজুল ইসলামের সঙ্গে ৬৩ রানের পর তানজিম সাকিবের সঙ্গে ৯৫ রানের দারুণ জুটি গড়ে নিজেই তুলে নেন অসাধারণ এক সেঞ্চুরি। টেস্ট ক্যারিয়ারে এটি তার দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। প্রথম সেঞ্চুরিটাও পেয়েছিলেন চট্টগ্রামের এই মাঠেই।
দ্বিতীয় সেঞ্চুরির দিনে মাইলফলকের খাতায়ও উঠেছে মিরাজের নাম। সাকিব আল হাসানের পর মাত্র দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে মিরাজ টেস্ট ক্রিকেটে ২০০০ রান এবং ২০০ উইকেটের মাইল পূরণ করেছেন। অবশ্য ম্যাচের সংখ্যার হিসেবে মিরাজ টপকে গেছেন সাকিবকে। এ ছাড়া সাকিব ও সোহাগ গাজীর পর তৃতীয় বাংলাদেশি হিসেবে একই ম্যাচে সেঞ্চুরি ও ফাইফারের কীর্তি গড়েন মিরাজ।
সাকিবের ১১ বছরের পুরোনো রেকর্ডে ভাগ বসালেন মিরাজ
স্পিনারদের দাপট
সিলেটের মাটিতে প্রথম টেস্টে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হেরেছিল বাংলাদেশ দল। যদিও সেখানকার স্পোর্টিং উইকেটে টাইগার স্পিনাররা ছিলেন ছন্দময়। আলাদা করে মিরাজের নাম বলতেই হয়। তিনি দুই ইনিংসেই সংগ্রহ করেছিলে ৫ উইকেট করে। চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম ইনিংসে তাইজুল ইসলাম সংগ্রহ করেছিলেন ৬ উইকেট। দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ উইকেট নেন মিরাজ।
এ ছাড়া নাইম হাসানও সংগ্রহ করেন ১ উইকেট। দুই টেস্ট মিলিয়ে জিম্বাবুয়ের ৪০ উইকেটের মধ্যে ২৯ উইকেট শিকার করেছেন টাইগার স্পিনাররা। সে হিসেবে বলা যায় দুই টেস্টেই দাপুটে পারফর্ম ছিল মিরাজ-তাইজুলদের। সিরিজ শেষেও অধিনায়ক শান্ত এই দুজনকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন।
ঘরের মাঠে ৬ টেস্ট পর জয়
গত দেড় বছরে দেশের বাইরে টেস্ট জিতলেও বাংলাদেশ নিজেদের ডেরায় ফরম্যাটটিতে হারের বৃত্তে আটকে পড়েছিল। খুব কাছে গিয়েও জিততে পারেননি টাইগাররা। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হেরেছে প্রায় নিশ্চিত জয়ের ম্যাচ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই টেস্ট হারের পর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও হেরেছিল শান্ত-শরিফুলরা। এরপর চলতি বছর জিম্বাবুয়ের কাছে প্রথম টেস্টে হার।
ফলে চট্টগ্রামের মাটিতে আক্ষেপ ঘুচানো জয়টি এলো। যা প্রায় বছর দেড়েক এবং সবমিলিয়ে ৬ টেস্ট পর ঘরের মাটিতে জয়। নিশ্চিতভাবেই এটি পরবর্তী সিরিজের জন্য আত্মবিশ্বাস যোগাবে বাংলাদেশ দলকে।
সিরিজ জিতলেও পুরো তৃপ্ত নন বাংলাদেশ অধিনায়ক
দ্বিতীয় টেস্ট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে শান্ত বলেন, ‘আমি খুব বেশি খুশি না। দুই ম্যাচের কথা যদি বলেন, এর থেকে ভালো ক্রিকেট খেলা উচিৎ ছিল। সিরিজটা জেতা উচিৎ ছিল আমাদের। তবে তাইজুল ভাই প্রথম ম্যাচে বোলিংয়ের পর চট্টগ্রামে যেভাবে কামব্যাক করেছেন। ওপেনিং জুটি সাদমানের (ইসলাম) ভালো ১০০, (এনামুল হক) বিজয় এতদিন পর দলে আসার পর সুন্দর ব্যাটিং করেছে, যদিও বড় রান হয়নি। ওপেনিংয়ে এই জায়গাটা অনেক ভালো লেগেছে। এখানে ধারাবাহিক হতে হবে।’
‘বেশি যেটা ভালো লেগেছে (তানজিম হাসান) সাকিবের ব্যাটিংটা, আজকে অনেক ভালো খেলেছে। টেইল-এন্ডারে অতীতে দেখেছি তাইজুল ভাই অনেক বল ফেইস করেন, আজকে সাকিবের ব্যাটিংটা দারুণ ছিল।’